নিকলীর বড় হাওরে এখনো আসেনি অতিথি পাখি

১০ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে সারা দেশে পরিচিত ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার বিস্তৃত হাওর এলাকা। কিন্তু এই বছর বড় হাওরে এখনো আসেনি কোনো পরিযায়ী পাখি। সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি আসত বড় হাওরটিতে। সাধারণত প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে হালকা শীতের আমেজ শুরু হতেই বড় হাওরে পরিযায়ী পাখির আসা শুরু হয়। মাঘের শেষ পর্যন্ত থাকে তাদের এই পদচারণা। শীতে আসে, গরমে চলে যায়। কয়েক বছর আগেও এ সময়ে সবচেয়ে বেশি যে পরিযায়ী পাখি বড় হাওরে আসত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাপ পাখি, বড় পানকৌরি, ছোট ডুবুরি, বড় খোপা ডুবুরি, ধুপনি বক, বেগুনি বক, মেটে রাজহাঁস, চখাচখি, ছোট সরালি, বড় সরালি, লেনজা হাঁস, খুনতে হাঁস, পাটারি হাঁস, ফুলুরি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, সিঁথি হাঁস, পাতি হাঁস, বালিহাঁস, লাল ঝুটি ভূতিহাঁস, পাতি ভূতিহাঁস, পান্তা ঝিলি, কুট, লাল ঢেঙ্গা, মেটেমাথা টিটি, তিলা লালপা, সবুজপা, বিল বাটান, সোনালি বাটান, কালোমাথা গাঙচিল, খয়রামাথা গাঙচিল, কুরা, কালেম পাখিসহ নানা প্রজাতির পাখি। পাখির কলকাকলিতে আশপাশের এলাকা উজ্জীবিত হয়ে উঠত। এসব পরিযায়ী পাখি কখনো জলকেলি, কখনো খুনসুটি কিংবা খাদ্যের সন্ধানে এক হাওর থেকে অন্য হাওরে গলায় স্বর তুলে ঝাঁকে ঝাঁকে আকাশে ওড়ে। কিন্তু এ বছর নিকলীর হাওরে এখনো আসেনি কোনো পরিযায়ী পাখি। এবার এই জলাভূমিতে শীত এসেছে, কিন্তু দেখা নেই পরিযায়ী পাখির। স্পট ঘুরে দেখা যায়, হাওরের জলাভূমিতে শীত এসেছে, কিন্তু অতিথি পাখির দেখা নেই। তবে অতি নগণ্য সংখ্যক দেশি প্রজাতির পাখি বক, পানকৌড়ি, গাঙচিল, মাছরাঙা ইত্যাদি কিছু পাখির দেখা মিলেছে। নিকলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, নিকলীর বড় হাওরে অব্যবস্থাপনার কারণে দিনের পর দিন সেই পরিযায়ী পাখি আসা কমতে শুরু করে। এই বছর ডিসেম্বরের শেষ সময়েও হাওরে পাখির দেখা মেলেনি। তিনি আরো বলেন, দেরিতে হলেও কিছু পাখি হয়তো আসতে পারে। কিন্তু চলতি বছরে নিকলীর হাওরের পাখির অভয়াশ্রম ঘোউউত্রা, ধনু নয়নবালি নদী ও বিভিন্ন বিলের আশপাশে এক শ্রেণির জেলেরা শুরু থেকেই বিভিন্ন ফাঁদ পেতে মৎস্য শিকার করছে। এতে করে হাওরে আসা পরিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তার ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এতে ভবিষ্যতে নিকলী হাওর থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে পরিযায়ী পাখি। এছাড়া হাওরে অব্যবস্থাপনার কারণে হাওরের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট, অপরিকল্পিত পর্যটনের বিকাশ, পেশাদার পাখিশিকারিদের দৌরাত্ম্য, স্থানীয়দের উদাসীনতা ইত্যাদি কারণে দিনের পর দিন সেই পরিযায়ী পাখি আসা কমছে। নিকলী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ মনির বলেন, সংরক্ষিত হওয়ার পরও স্থানীয় পাখি শিকারিদের উৎপাত ও রাতে বিভিন্ন রকমের ফাঁদ তৈরি করে পাখি শিকার, অপরিকল্পিত পর্যটন ব্যবস্থাপনা, পাখির আবাসস্থল বিনষ্ট, খাদ্য- সংকট সর্বোপরি পাখির নিরাপত্তাহীনতার কারণেই নিকলীর হাওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পরিযায়ী পাখি। ফলে এখন পাখিশূন্য হয়ে পড়েছে হাওরটি। আমরা চাই নিকলীর বড় হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে উঠক। নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া আক্তার বলেন, শীত মৌসুমে উপজেলার বড় হাওরে অনেক পরিযায়ী পাখির সমাবেশ হয়। এ বছর এখনো পাখি না আসার বিষয়টি উদ্বেগজনক। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাওরে চুরি করে পাখি শিকার বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। এছাড়াও পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল, খাদ্য-সংকট দূরীকরণ এবং নিরাপদ বিচরণের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। নিকলীর বড় হাওরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং এটা অব্যাহত থাকবে।