বিদ্রোহীদের কৌশলেই ‘এগোচ্ছে’ জান্তা
বিদ্রোহীদের কৌশল কাজে লাগিয়েই রণক্ষেত্রে ‘এগোচ্ছে’ মিয়ানমার জান্তা। তাদের পরাস্ত করতে মর্টার ও নিয়ন্ত্রিত আর্টিলারি হামলা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। চীন ও রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত ড্রোন হামলায় অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে বিদ্রোহী দল। এর আগে আধুনিক, তবে সস্তা এসব সমরাস্ত্র কাজে লাগিয়েই যুদ্ধক্ষেত্রে জান্তাকে ঘায়েল করেছিল দেশটির বিদ্রোহীগোষ্ঠী। বৃহস্পতিবার এএফপির প্রতিবেদনে উঠে আসে এ তথ্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধরত মিয়ানমারের এক সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রযুক্তিগত দিক থেকে দুর্বল থাকায় আমাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ড্রোন থেকে বোমা হামলা চালানোয় আমরা অনেক ঘাঁটি হারিয়েছি। ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, ‘বিদ্রোহীরা ড্রোনের সঙ্গে জ্যামারও ব্যবহার করত। ফলে আমাদের যোগাযোগে ব্যাঘাত বা শত্রু উপস্থিতি শনাক্ত করতে না পারায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেত। এবার আমরাও ড্রোন আর জ্যামার ব্যবহার করছি।’ ২০২১ সালে দেশের শাসনক্ষমতা সামরিক বাহিনী দখল করার পর থেকেই মারাত্মক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পড়েছে মিয়ানমার। প্রায় চার বছরের সংঘর্ষে কয়েক মাস ধরেই রক্ষণাত্মক অবস্থানে ছিল জান্তা সরকার। বিদ্রোহীদের কাছে দেশের বিশাল অংশের দখল হারিয়েছে তারা। এর পেছনে বড় প্রভাবিক ছিল বিদ্রোহীদের হাতে থাকা ড্রোন। চীনে প্রস্তুতকৃত এসব ড্রোন কৃষি বা অন্যান্য বেসামরিক উদ্দেশে সংগ্রহ করত তারা। পরবর্তী সময়ে নিজেদের শিবিরে নিয়ে এগুলোতে বোমা সংযুক্ত করা হতো। এবার সেই ড্রোন পদ্ধতিই আবার ব্যবহার করছে জান্তা। তাদের হামলা করা এমনই একটি সংঘর্ষপূর্ণ গ্রাম মোবোয়েতে। সেখানে বিদ্রোহীদের একটি গাড়িতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে জান্তা বাহিনী। বিদ্রোহীদের নিয়ে গাড়িটি একটি বাড়ির বাইরে থামানোর সঙ্গে সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে তাদের অনুসরণকারী ড্রোন থেকে একটি বিস্ফোরক ফেলা হয়। ভোরের কুয়াশার চাদরে গাঢাকা দিয়ে মোবয়ে টহল দিয়ে বেড়াত জান্তাবিরোধী একটি গোষ্ঠী কায়ান ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)। কিন্তু আকাশ পরিষ্কার হওয়া শুরু করতেই মিয়ানমার বাহিনীর নতুন অস্ত্রের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে তারা। হামলা থেকে বাঁচতে জঙ্গলের ভেতর আশ্রয় নেয় জান্তাবিরোধীরা। প্রতিটি বিস্ফোরণে আওয়াজের সঙ্গে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ যেন আরও গভীর হচ্ছিল। কেএনএ দলের এক কমান্ডার বা কোনে, এএফপিকে বলেছেন, জান্তার কৌশল আগে অন্যরকম ছিল। তারা হামলার আগে ওই স্থান রেকি করতে পদাতিক সেনাদের পাঠাত। এখন তারা আগে ড্রোন পাঠায়, আর সেনারা আসে পরে। সাধারণ বেসামরিক ড্রোনের চেয়ে অনেক ওপরে, অন্তত দেড় হাজার মিটার পর্যন্ত উঠতে পারে জান্তার ড্রোন। ফলে জ্যামার দিয়েও এগুলোর যোগাযোগ ব্যাহত করতে পারছে না কেএনএ। কোনে বলেছেন, জান্তার কাছ থেকে বাঁচতে এখন লুকিয়ে থাকা ছাড়া আপাতত কোনো পথ খোলা নেই। এদিকে মিয়ানমারের জান্তা বিমান হামলায় পশ্চিম রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। এ ঘটনায় আরকান আর্মি (এএ) মুখপাত্র খাইং থু খা জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে রামরি দ্বীপের কিয়াউক নি মাউ-এ একটি সামরিক জেট বোমাবর্ষণ করে। তখন বিভিন্ন স্থানে আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় প্রায় ৫০০ বাড়ি পুড়ে যায়।