জনপ্রতিনিধি না থাকায় জনভোগান্তি চরমে

৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

পুরান ঢাকার ‘বইপাড়া’ খ্যাত বাংলাবাজার ছাড়িয়ে একটু সামনে এগুলেই শ্রীশদাস লেন। আর সেখানকার বিউটি বোর্ডিংয়ে গত শতকের পঞ্চাশ-ষাট দশকে বসত শিল্প-সাহিত্য জগতের মানুষদের বিশাল মিলনমেলা। বর্তমানেও জ্ঞানপিপাসু, ভ্রমণপিয়াসী মানুষদের আড্ডাস্থল ও দর্শনীয় স্থান বিউটি বোর্ডিং। শনিবার বিউটি বোর্ডিংয়ে দেখা যায়-থুতনিতে ভর দিয়ে একা একা বসে আছেন সমর সাহা। দর্শনার্থীর হিসাব ও খাবারের বিল গ্রহণ করেন তিনি। এভাবে কেন বসে আছেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাস্টমার নেই ভাই। মাসের পর মাস রাস্তার যে অবস্থা, কাস্টমার আসবে কিভাবে। সারা দেশ থেকে এখানে দর্শনার্থীরা আসত গাড়ি নিয়ে। কিন্তু বর্তমানে এখানে হেঁটে প্রবেশ করাও কষ্টকর।’ একটু সামনে এগোলে একটি দোকান থেকে একজন বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?’ এমন কথার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে মো. নয়ন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার এমন বেহাল অবস্থা। দোকান ঘেঁষে রাস্তায় গর্ত করে রেখে দেওয়া হয়েছে। ক্রেতার দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই। আগে যে কোনো বিষয়ে আমরা কৈফিয়ত চাইতে পারতাম। এখন কৈফিয়ত চাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। জনপ্রতিনিধিরা সব ভেগে গেছেন। আমাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখার কেউ নেই। শুধু নয়নের দোকানের সামনেই নয়, বাংলাবাজার থেকে শুরু করে সূত্রাপুর পর্যন্ত পুরো রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি। খানাখন্দের কারণে ব্যস্ত রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ৩৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা আহসান মঞ্জিল। নান্দনিক স্থাপনাটি ঢাকার অন্যতম জাদুঘরে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভিড় জমায় এ স্থাপনা দেখতে। এমন একটা ঐতিহাসিক স্থাপনার সামনে রাস্তার যে বেহাল অবস্থা, তা সত্যিই হতাশাজনক। আহসান মঞ্জিলের চারপাশে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আহসান মঞ্জিলের সামনে রয়েল টাওয়ারের মালিক সমিতির সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম রানা বলেন, এখানে ৫০০ মতো দোকান আছে। বেচাকেনা নেই বললেই চলে। রাস্তা কাটাকাটির জন্য গাড়ি আসতে পারে না। বেচাকেনা করতে পারছে না দোকানিরা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক করার জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, কিন্তু আর কোনো খবর নেই। আহসান মঞ্জিলের সামনের রাস্তা সংস্কারের কাজটি ঠিকাদার জিয়া করছেন বলে শুনেছি। বাস্তবে তাকে দেখিনি, কাজের অগ্রগতিও বুঝি না। স্থানীয় বাসিন্দা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, নর্থ সাউথ সড়কের জায়গায় জায়গায় গর্ত। কোর্ট কাচারির সামনে প্রতিটি গর্তে মাটি আর ইট দিয়ে ডেকে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে এখন শুধু ধুলাবালি ওড়ে। কচ্ছপগতির চেয়েও কম গতিতে কাজ চলছে। রাস্তাঘাট একেবারেই চলাফেরায় অনুপযোগী। অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা টিকাটুলির বাসিন্দা ঝুমুর আবেদিন বলেন, টিকাটুলি পেট্রোল পাম্পের গলির রোড দীর্ঘ বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় আছে। একটা রিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে চলাচল করতে পারি না। পুরান ঢাকার বংশাল, পাকিস্তান মাঠ, আবুল হাসানাত রোড, সুরিটোলা, টিকাটুলি, গেন্ডারিয়া, লক্ষ্মীবাজার, টিপু সুলতান রোড, চকবাজার ঘুরে দেখা যায়-অধিকাংশ রাস্তাই খোঁড়া। কোথাও ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে, কোথাও খুঁড়ে বসানো হচ্ছে পাইপ। আবার কোথাও পাইপ বসানো শেষে মাটি ভরাট করে ইটের খোয়া বিছানো হচ্ছে। অথচ এসব রাস্তা দিয়ে ব্যবসায়ীরা মালামাল আনা নেওয়া করেন। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে তারা মালামাল আনা নেওয়া করতে পারছেন না। পুরান ঢাকার মার্কেটগুলোতে পাইকারিসহ খুচরা জিনিসপত্রের বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। দোকানগুলোতে নিয়মিত ভারী মালামাল আনা নেওয়া করতে হয়। এসব মালামাল ছোট ছোট পিকআপ ভ্যানে আনা-নেওয়া করা হলেও খোঁড়াখুঁড়ির কারণে তা করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরের অধিকাংশ রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি করার অভিযোগ উঠেছে। পুরান ঢাকা নিয়ে ডিএসসিসির অঞ্চল-৪ এর কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে ডিএসসিসির প্রশাসক নজরুল ইসলাম বলেন, নগরবাসীর ভোগান্তি লাঘব করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। স্থানীয় সরকারের সুচিন্তিত নির্দেশনা এবং প্রকৌশল বিভাগের নিরন্তর তৎপরতায় ইতোমধ্যে অনেক সড়কের খানাখন্দ ও বড় গর্ত মেরামত করতে সক্ষম হয়েছি। যেসব সড়কে মেরামত কাজ বাকি আছে সেসবের কাজ শিগগিরই শেষ হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নগরবাসী আমাদের এসব কার্যক্রমের সুফল ভোগ করবে।