কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধা হেনস্তা, ৩০ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি

২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ৩০ বিশিষ্ট নাগরিক। এ ধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সব রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা মঙ্গলবার গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠিয়েছেন। বিবৃতিতে আরও স্বাক্ষর করেছেন আনু মুহাম্মদ, সুলতানা কামাল, খুশী কবির, ইফতেখারুজ্জামান, গীতি আরা নাসরীন, ফিরদৌস আজীম, জেড আই খান পান্না, পারভীন হাসান, শিরীন পারভীন হক, জোবায়দা নাসরিন, রোবায়েত ফেরদৌস, তবারক হোসাইন, সুব্রত চৌধুরী, শামসুল হুদা, শহিদুল আলম, ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, সায়দিয়া গুলরুখ, রেহনুমা আহমেদ, তাসনিম সিরাজ মাহাবুব, ফসটিনা পেরেইরা, জাকির হোসেন, সাইদুর রহমান, মনীন্দ্র কুমার নাথ, পাভেল পার্থ, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আশরাফ আলী, শাহাদাত আলম, নাজমুল হুদা, হানা শামস আহমেদ ও সাঈদ নাসের বখতিয়ার আহমেদ। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগের সঙ্গে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জেনেছি যে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু ২২ ডিসেম্বর, রোববার দুপুরে ওষুধ কিনতে বাজারে গিয়েছিলেন। তার ভাষ্যমতে, এ সময় স্থানীয় জামায়াত কর্মী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে ১০-১২ জন তাকে ধরে জুতার মালা পরিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে তাকে দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ারও নির্দেশ দেয় তারা। ওই ঘটনায় উপস্থিত জড়িত আরও কয়েকজন হলো কুলিয়ারা গ্রামের আবুল হাশেম, অহিদুর রহমান, পেয়ার আহমেদ, রাসেল, শহীদ, এমরান হোসেন, ফরহান হোসেন, কামরান হোসেন। শুধু জুতার মালা পরিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি, তা ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়। সংগত কারণেই তিনি প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেয়েছেন এবং তার নিরাপত্তাও বিপন্ন। তাই তিনি এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। বিবৃতিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখক, অধ্যাপক, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার এই ব্যক্তিরা বলেছেন, আমরা এহেন ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর উপযুক্ত ভাষা জানি না। প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আমরা ইতোমধ্যে শনাক্ত করা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই, ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা রাজনৈতিক আক্রোশ—কারণ যা–ই হোক, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। অন্তর্বর্তী সরকার, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এর বিরুদ্ধে দুর্জয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সদা সক্রিয় থাকতে হবে। কুমিল্লার এ ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। এতে বলা হয়েছে, মনে রাখতে হবে, গত ১৬ বছরের কর্তৃত্ববাদী সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দলীয়করণের মাধ্যমে যেভাবে পদদলিত করেছে, তার দায় পতিত সরকারের প্রধান ও তার সহযোগীদের। তাই বলে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কোনো প্রকার অসম্মান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সব রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি এ ধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা। তারা আরও বলেছেন, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দুজনকে জামায়াতের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়। আমরা মনে করি, মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের স্বীকৃতি ও সম্মান বিষয়ে জামায়াতের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও তার বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের প্রকাশ্য ঘোষণা যেমন অপরিহার্য, সেই সঙ্গে ১৯৭১ সালে তাদের অবস্থানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা বাঞ্ছনীয়।