ক্যাডার সংগঠনগুলোর পালটাপালটি কর্মসূচি
বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সংগঠন নানা দাবিতে পালটাপালটি কর্মসূচি দেওয়া অব্যাহত রেখেছে। এতে কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের প্রশাসনে সৃষ্টি হয়েছে একধরনের অস্থিরতা। মঙ্গলবার ঢাকাসহ সারা দেশে এক ঘণ্টার কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন প্রশাসন ছাড়া ২৫টি ক্যাডারের (আদার্স ক্যাডার) কর্মকর্তারা। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। তাদের দাবি-উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোনো কোটা থাকবে না। উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদগুলো সরকারের। এসব পদ কোনো ক্যাডারের না। ওইসব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো ক্যাডারের জন্য কোটা সংরক্ষণ করা বৈষম্য। বরং উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি হবে। সুতরাং বৈষম্যহীন বর্তমান সরকার বৈষম্য জিইয়ে রাখতে পারে না। তারা আরও বলছেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পদোন্নতির আনুপাতিক হার ৫০:৫০ প্রস্তাব করেছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। পদোন্নতির বিদ্যমান ৭৫:২৫ শতাংশ বিলুপ্ত করতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে নেওয়া চলবে না। সংগঠনটি বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। পরিষদের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, আমরা পালটাপালটি কর্মসূচির পক্ষে না। এটি অশোভন কাজ। আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যা সমাধান হোক। উপদেষ্টাদের আমাদের কথাগুলো বলতে চাচ্ছি। মঙ্গলবারও একজন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে আমাদের কথাগুলো শোনার অনুরোধ করেছি। আমরা আরও বলেছি, আলোচনার টেবিলে সমস্যার সমাধান না হলে আমরা ৪ জানুয়ারি মহাসমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব। এদিকে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। এদিকে আজ প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বিএএসএ এবং বিসিএস (প্রশাসন) পরিবার কল্যাণ সমবায় সমিতির উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইএএম) অডিটোরিয়ামে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া আগামী পরশু অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিএএসএ-এর সঙ্গে সভা করবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সভাপতি ড. মো. আনোয়ার উল্যাহ বলেন, বিএএসএ-এর সদস্যরা তাদের মনের কথা প্রাণ খুলে প্রকাশ করবে। ক্যাডার নিয়ে তাদের ভাবনা এবং যুক্তিগুলো উপস্থাপন করবে। ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনপ্রধানের বক্তব্যে কেন উচ্চ আদালতের রায়ের ভায়োলেশন, তা তুলে ধরবেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সংগঠনের সদস্যদের বক্তব্য থেকে যা উঠে আসবে, সেই আলোকে প্রস্তাব তৈরি করে তা বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় সভায় উপস্থাপন করা হবে। একক কোনো ব্যক্তির কথা না, বরং সব সদস্যের বক্তব্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এ কারণে আমরা এই সভার আয়োজন করেছি। এছাড়া বিসিএস (প্রশাসন) পরিবার কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব (পিএস) এবিএম আব্দুস সাত্তার বলেন, আমরা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনপ্রধান ও সদস্যসচিবের পদত্যাগ চাই। এ কমিশনের বিলুপ্তি চাই। কারণ, তারা রিপোর্ট দেওয়ার আগেই অযৌক্তিক সব বক্তব্য দিয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তারা বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে সরকারকে ব্যর্থ করতে চান। সুতরাং আমাদের দাবি, এ কমিশন বিলুপ্ত করে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই কমিশনে বিএএসএ-এর প্রতিনিধি এবং বিসিএস (প্রশাসন) পরিবার কল্যাণ সমবায় সমিতির প্রতিনিধি রাখতে হবে। এটাই আমাদের দাবি।