আহত জুয়েলের শ্বাসনালীতে লাগানো হলো টিউব, শরীরের ৭৫% ‘ভালো’

২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৫:৩১ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

চাঁদপুরের মেঘনা নদীর হাইমচর উপজেলার ইশানবালা এলাকায় এমভি আল-বাখেরা নামে সারবাহী একটি জাহাজে দুর্বৃত্তরা আক্রমণ চালিয়ে ৭ জনকে গলাকেটে ও মাথা থেঁতলে হত্যা করেছে। জাহাজে থাকা ৮ জনের মাঝে বেঁচে যাওয়া একজন সুকানি জুয়েল রানা (২৮)। সোমবার তাকে জাহাজ থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। অ্যাম্বুলেন্স থেকে থাকা নৌপুলিশকে তিনি কিছু একটা লিখে বলার চেষ্টা করছিলেন। কারণ তার শ্বাসনালী কেটে যাওয়ায় তিনি কিছু বলতে পারছিলেন না। তবে একটি মোবাইল নম্বর দিয়েছেন তিনি। জাহাজে বেঁচে থাকা একমাত্র জুয়েল রানা ফরিদপুর সদর উপজেলার সেকেন খালাসীর ছেলে। বর্তমানে তিনি ঢামেকের নাক কান গলা বিভাগের ৩০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। জুয়েল রানার শ্বাসনালী কেটে যাওয়ায় সেখানে একটি টিউব যুক্ত করা হয়েছে। তিনি এখনও শঙ্কামুক্ত নন। এব্যাপারে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে চাঁদপুর নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম এস ইকবাল জানান, আহত জুয়েল রানার শরীরের ৭৫% ভালো রয়েছে বলে জেনেছি। শ্বাসনালীতে একটি টিউব যুক্ত করা হয়েছে। আহত জুয়েলের মামা মো. সিরাজ সরদার জানান, তাদের বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলার মমিন খারহাট গ্রামে। তার বাবার নাম সেকেন খালাসী। আল বাখারা নামে ওই জাহাজে সুকানি হিসেবে চাকরি করতেন জুয়েল। দুপুরে এই হত্যাকাণ্ডের খবর শুনতে পান তারা। পরে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে আহত জুয়েলকে দেখতে পান। তবে জুয়েল কোনো কথা বলতে পারছে না। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তার। এর আগে সোমবার তিনি জানান, আমরা আহত জুয়েলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি; কিন্তু তিনি কথা বলতে পারেননি। শুধু একটি কাগজে তার নাম আর একটি মুঠোফোন নম্বর দিয়েছেন। আমাদের ধারণা, জুয়েল হয়তো কিছু একটা জানেন বলে বলার চেষ্টা করেছেন। তবে এখনো কোনো তথ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। জুয়েল রানার ভাই লিটন খালাসী বলেন, জুয়েল চার বছর ধরে ওই জাহাজে সুকানির কাজ করছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে সার নিয়ে সিরাজগঞ্জের বাড়াবাড়ীতে যাবার কথা ছিল। ঢামেকের নাক কান গলা বিভাগের দায়িত্বরত ডা. সিরাজ সালেক বলেন, তার গলার মাংসপেশি কেটে গেছে। সেখানে সেলাই করা হয়েছে। এছাড়া গলার টাকিয়া কেটে গেছে। এই মুহূর্তে সেটি জোড়া লাগানো সম্ভব না। আগে তার ইনফেকশন কন্ট্রোল করতে হবে। তিনি নাক-মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে পারছেন না। তার গলায় আলাদা শ্বাসনালী হিসেবে টিউব ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গলার ক্ষতটা যখন কিছুটা শুকাবে তখন আমরা টাকিয়া জোড়া লাগাব। এটি লম্বা প্রক্রিয়া। এছাড়া তার শরীর থেকে যথেষ্ট পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর হিসেবে ধরা হচ্ছে। এদিকে জাহাজে সাতজনকে নৃশংসভাবে হত্যার কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে সেখান থেকে কিছু লুট হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ। ইতোমধ্যে দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। এসব ফোনে থাকা কললিস্ট ধরে তদন্তকাজ চলছে। জাহাজটির মালিকপক্ষ ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। চাঁদপুর সদর হাসপাতালের মর্গে থাকা নিহত ৭ জনের মধ্যে ৬ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- ফরিদপুর সদরের গোলাম কিবরিয়া (জাহাজের মাস্টার), কিবরিয়ার ভাগ্নে সবুজ শেখ, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সালাউদ্দিন (ইঞ্জিনচালক), জাহাজের সুকানি আমিনুল মুন্সী, স্টাফ সজিবুল ইসলাম, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমিনুল মুন্সী (লস্কর)। প্রসঙ্গত, পণ্যবাহী জাহাজটি গত রোববার সকাল ৮টার দিকে চট্টগ্রামের কাফকো সার কারখানার ঘাট থেকে যাত্রা করে। এরই মধ্যে কোম্পানির মালিক শিপন বাখেরা জাহাজে ফোন করে কাউকে পাননি। এতে সন্দেহ হয় মালিকপক্ষের। জাহাজের অবস্থান এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে মেসার্স বৃষ্টি এন্টারপ্রাইজের অন্য জাহাজ মুগনি-৩ থেকে যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়। ওই সময় মুগনি জাহাজটি মাওয়া থেকে ঘটনাস্থল দিয়ে অতিক্রম করার সময় বাখেরা জাহাজটি দেখতে পায়। ওই সময় তারা জাহাজের লোকদের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দেন। ফোন পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জাহাজ থেকে নিহত ও আহতদের উদ্ধার করেন। তারা যখন জাহাজটিতে উঠেছিলেন, তখন ইঞ্জিন বন্ধ ছিল।