ওস্তাদ রাহাত আলির সুরে বিমোহিত দর্শক
আল্লাহু... আল্লাহু...। সাজনা তেরে বিনা...। নীলা তুমি কি চাও না, হারাতে ওই নীলিমায়...। আমি আকাশ পাঠাব...। দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় সব গানে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মেতেছিল বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। র্যাপারের উন্মাদনায় শীতের সন্ধ্যা উষ্ণতা ছড়িয়েছিল দর্শক শরীরে। কুয়াশার চাদর বা রাতের অন্ধকার ফুঁড়ে সমর্থকদের চোখে উৎসবের আলো ছড়িয়েছে তারুণ্যের উৎসব। এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই– স্লোগানকে মূলমন্ত্র করে গতকাল শুরু হলো তারুণ্যের উৎসব ২০২৫। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই স্লোগানকে অগ্রাধিকার দিয়ে রচিত হয়েছে বিপিএলের থিম সং। শিরোনাম– এলো বিপিএল। থিম সংয়ে কণ্ঠ দিয়েছেন র্যাপার হান্নান, প্রিতম ও রাফার। ২০২৫ সালের বিপিএলে সবদিক থেকেই নতুনত্ব আনার চেষ্টা। থিম সং লেখা হয়েছে নতুন করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও ছিল জমকালো। ভারতীয় শিল্পীর জায়গায় মঞ্চে সম্মান পেয়েছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি কাওয়ালি শিল্পী ওস্তাদ রাহাত ফতেহ আলি খান। কিংবদন্তি কাওয়ালি শিল্পী ওস্তাদ নুসরাত ফতেহ আলি খানের ভ্রাতুষ্পুত্র পাকিস্তানের রাহাত ফতেহ আলি খানের সুরের মূর্ছনায় বিমোহিত হন দর্শক। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী পাকিস্তানের ফয়সালাবাদের ওস্তাদের ঢাকায় দ্বিতীয় দিন সংগীত পরিবেশন ছিল গতকাল। এদিন রাহাত ফতেহ আলি খানের সঙ্গে গান গেয়েছেন ছেলে সাজমান খানও। ২১ ডিসেম্বর আর্মি স্টেডিয়ামে ছাত্রদের জন্য গেয়েছেন তিনি। জুলাই বিপ্লবের নায়কদের সম্মানে নেননি পারিশ্রমিক। তবে বিপিএলের কনসার্ট থেকে প্রাপ্ত সম্মানী মোটা অঙ্কের– ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গতকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৪টায়। প্রথম থেকে মঞ্চ মাতান অ্যাভয়েড রাফা নিজের মতো করে– আমি আকাশ পাঠাব...। আনমনে...। হারকালা...। রাফার পরিবেশনা শেষে বিপিএলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। জুলাই গণহত্যার ভিডিও এবং অডিও ভিউজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয় এ সময়। বিপ্লবের নায়কদের মঞ্চে উপস্থিত হওয়া শেষে ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধা ও ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ এবং আহতদের স্মরণ করে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা জানেন, একটি দীর্ঘ লড়াইয়ের পর একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। তারই অংশ হিসেবে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিপিএলও নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে।’ এর পরই তিনি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সন্ধ্যার পর সঞ্জয়, জেফাররা র্যাপ সংগীত পরিবেশন করেন। এর পর মঞ্চে ওঠেন মাইলসের হামিন। তিনিও এক ঘণ্টা ধরে নিজেদের সব জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন। আতশবাজির ফোয়ারা, লেজার শোয়ের মাধ্যমে আনন্দ বিলিয়েছে দর্শকদের। বিপিএলের প্রথম আসর ২০১২ সাল থেকেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হচ্ছে। প্রথম আসরে ভারতের বাপ্পি লাহিড়ী শান সংগীত পরিবেশন করেন। বিপিএলের প্রথম থিম সংয়েও কণ্ঠ দিয়েছিলেন তারা। অতীতে হৃতিক রোশন, জ্যাকলিন ফার্নান্দেজ, সালমান খান, এ আর রহমানের মতো ভারতীয় তারকারা বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন। বিপিএলে ভারতীয় ক্রিকেটাররা না খেললেও তাদের চিত্রতারকা ও সংগীত শিল্পীদের গুরুত্ব ছিল বেশি। জুলাই বিপ্লবের পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনে দেশটি থেকে কোনো শিল্পীকে বিপিএলের উদ্বোধনীতে আনা হয়নি। প্রথমবারের মতো বিপিএলের সংগীত পরিবেশন করার সুযোগ পেলেন কোনো পাকিস্তানি সংগীত শিল্পী।