যুদ্ধবিরতির দ্বারপ্রান্তে হামাস-ইসরায়েল
দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তা রোববার জানান, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির আলোচনা ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনও কিছু বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে, যেগুলো সমাধান করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, গাজা-মিসর সীমান্তবর্তী ফিলাডেলফি করিডোর। যেখানে যুদ্ধবিরতির পরও নিজ সেনাদের রাখতে চায় ইসরায়েল। কিন্তু হামাস এর বিরোধিতা করছে। এই করিডোরের মাধ্যমে মিসর থেকে গাজায় পণ্য আসে। ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, কাতারের রাজধানী দোহায় চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, গাজার সীমান্ত এলাকায় বাফার জোন তৈরি করবে ইসরায়েল। যা কয়েক কিলোমিটার প্রশস্ত হবে। হামাস বা অন্য কোনো গোষ্ঠী যেন ইসরায়েলে ঢুকে পড়তে না পারে, সেজন্য বাফার জোনে সব সময় সেনা মোতায়েন রাখবে ইসরায়েল। যদি এসব বিষয়ে দু’পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছায়, তাহলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তিন ধাপের চুক্তি হতে পারে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রথম ধাপে একেকজন নারী জিম্মি সেনার বিনিময়ে ২০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। যারা ইসরায়েলের কারাগারে ২৫ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে বন্দি আছেন, তাদের মধ্য থেকে নির্ধারণ হবে কারা মুক্তি পাবেন। তবে ফাতাহর সিনিয়র নেতা মারওয়ান বারগোতির নাম এতে থাকার সম্ভাবনা নেই। কারণ, ইসরায়েল তাঁকে ছাড়তে রাজি নয়। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় এখনও যে ৯৬ ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন, তাদের মধ্যে ৬২ জন জীবিত আছেন। এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি হলে গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা নিজ বাড়িতে ফিরতে পারবেন। তবে সেখানে যেন সশস্ত্র যোদ্ধারা অস্ত্র না নিতে পারেন, সেটি পর্যবেক্ষণ ও নিশ্চিত করবে মিসর অথবা কাতারের কর্মকর্তারা। সেখানে প্রতিদিন ৫০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা যাবে। চুক্তির শেষ ধাপে ১৪ মাসের যুদ্ধ শেষ হবে। এর পর গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে ফিলিস্তিনিদের নিয়ে গঠিত সরকার। যেটির সদস্যদের সঙ্গে হামাস বা অন্যান্য গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারবে না। আর এই সরকারের প্রতি অবশ্যই গাজার সব গোষ্ঠীর সমর্থন থাকতে হবে। এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজায় বর্বর হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার বাহিনী। গতকাল উত্তরাঞ্চলের কামাল আদওয়ান ও আল-আওদা হাসপাতাল এবং একটি স্কুলে তাদের হামলায় ২৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গাজার উত্তরে একটি হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। অন্যদিকে, গত দুই সপ্তাহ ধরে পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী ক্যাম্পে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে খোদ ফিলিস্তিনি অথরিটি (পিএ)। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস নিজে এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন। জেনিনে সশস্ত্র গোষ্ঠীর শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে। সেখান থেকে তাদের নির্মূলে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ফিলিস্তিনি সরকারি বাহিনী। পিএর কর্মকর্তা বলেছেন, এসব গোষ্ঠীর তৎপরতার অজুহাত দেখিয়ে ইসরায়েল প্রায়ই পশ্চিম তীরে হামলা চালায়। তারা চাচ্ছেন এটি বন্ধ করতে। তবে নিজ নাগরিকদের ওপর সরকারের হামলায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। তারা সেখানে বিক্ষোভও করেছেন। তাদের মতে, ইসরায়েলি সেনা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হটাতেই জেনিনে অনেকে সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দিচ্ছেন। যদি যোদ্ধারা অস্ত্র ফেলে দেন, তাহলে ইসরায়েলি সেনারা তাদের ওপর আরও দমন-নিপীড়ন চালাবে। অন্যদিকে, ইয়েমেনের রাজধানী সানায় হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড জানিয়েছে, হুতিদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত ও দুর্বল করে দিতে তাদের মিসাইল ভান্ডারে হামলা চালানো হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে যুদ্ধের শুরু থেকে ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে হুতিরা। গত শনিবারও ইসরায়েলে একটি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ে তারা। যা সরাসরি তেল আবিবে আঘাত হানে। এর পরের দিনই ইয়েমেনে বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর বিবিসি ও ওয়াশিংটন পোস্টের