গত ৪৮ ঘণ্টায় ৩ মন্দিরে হামলা, প্রশ্নবিদ্ধ ‘নতুন বাংলাদেশ’

২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭:৩০ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার এবং ধর্মীয় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ময়মনসিংহ এবং দিনাজপুরে অন্তত তিনটি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা ধর্মীয় সহিংসতার এক নতুন মাত্রা নির্দেশ করে। এ ঘটনার ফলে, দেশব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ কি এখন ধর্মীয় সহিংসতার পীড়িত এক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে? হামলার ধরন ও জায়গা গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার, ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলায় দুটি মন্দিরে হামলা করা হয়। শাকুয়াই এলাকার বন্দেরপাড়া মন্দিরে দু’টি মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া বিলডোরা এলাকার পলাশকান্দা কালী মন্দিরেও হামলা হয়, যার ফলে কালীমূর্তির ক্ষতিসাধন হয়। স্থানীয় থানা পুলিশ হামলাকারীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে এবং এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। হালুয়াঘাট থানার ওসি আবুল খয়ের জানিয়েছেন, আলাউদ্দিন নামে স্থানীয় এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে পুরো ঘটনায় এখনও তদন্ত চলছে। এছাড়া, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ি শ্মশান কালী মন্দিরে ৫টি মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয় হিন্দুরা জানান, এমন ঘটনা তাদের এলাকাতেই প্রথম ঘটলো। মন্দির ভাঙচুরের সময় দুষ্কৃতীরা ইসকন বিরোধী স্লোগানও দিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতন: বাড়ছে উদ্বেগ গত নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বেড়ে গেছে। বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা, ইসকন মন্দিরের ভাঙচুর এবং সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভুর গ্রেপ্তারসহ একাধিক ঘটনা ঘটেছে। আন্তর্জাতিক মহলে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশিত হলেও, ঢাকা সফরে গিয়েছিলেন ভারতীয় বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি, কিন্তু এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বৃদ্ধি পাচ্ছে ধর্মীয় বিদ্বেষ, যার উদাহরণ হিসেবে মাহফুজ আলমের ফেসবুক পোস্টের বিষয়টি সামনে এসেছে। তিনি "অখণ্ড বাংলাদেশ" গড়ার কথা বলেছেন, যেখানে ভারতের একাধিক রাজ্যকে নিজেদের অধীনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই উসকানিমূলক মন্তব্য ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্টভাবে নিন্দা করেছে, এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করার পরামর্শ দিয়েছে। হিন্দু নির্যাতনের পরিসংখ্যান বাংলাদেশে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ২২০০টি হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, বলে জানিয়েছেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিং। এই সংখ্যাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক, যা জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার জন্যও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ ‘নতুন বাংলাদেশ’ এখন প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ কি সেই "নতুন" রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হতে চলেছে, যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আর কোনও নিরাপত্তা দেওয়া হবে না? এমন একটি দেশে যেখানে ধর্মীয় স্থানে হামলা হুমকি, প্রতিরোধহীন হিংসার ঘটনা দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে, সেখানে সমঝোতা বা শান্তির আশ্বাস কি সত্যিই বাস্তবায়িত হতে পারে? নতুন বাংলাদেশ গঠনের নামে যদি এই ধরনের অত্যাচার ও সহিংসতা চুপিচুপি গোপন থাকে, তবে এটি একটি ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে, যা দেশের বৈশ্বিক সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।