খুলনায় ‘অনুকূল’ পরিবেশে দল গোছাচ্ছে জামায়াত
প্রায় দেড় দশক পর খুলনায় দল গোছাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলো। নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে আবার চালু করা হয়েছে দলীয় কার্যালয়। কারাগারে ও পালিয়ে থাকা নেতাকর্মী এলাকায় ফিরেছেন। দলের অবস্থান দৃঢ করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে দলটি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ বছর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও পুলিশের চাপে ঠিকমতো কর্মকাণ্ড চালাতে পারত না তারা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আগের সেই অবস্থা নেই। এখন অনুকূল পরিবেশে দলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত দেড় দশকে হামলা-মামলা-নির্যাতনের পর এখন নির্বিঘ্নে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পেরে উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মী। গত ৫ আগস্টের পর থেকে খুলনার রাজপথে শক্তিশালী অবস্থান জানান দিচ্ছে দলটি। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে গত ৪ মাসে অন্তত ২০টি সভা-সমাবেশ করেছে জামায়াত। এ ছাড়া জেলা-মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে খোলা হয়েছে দলীয় কার্যালয়। গত ১৩ নভেম্বর মহানগর জামায়াতের ১৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানকে আমির ও শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলালকে সেক্রেটারি করা হয়। একই মাসে জেলা জামায়াতেরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এতে মাওলানা এমরান হুসাইনকে আমির ও মুন্সী মিজানুর রহমানকে সেক্রেটারি করা হয়। নেতারা জানান, নগরীর রয়্যাল মোড়ে জামায়াতের কার্যালয় আওয়ামী লীগ ভাঙচুর এবং বন্ধ করে দিয়েছিল। গত ২ নভেম্বর সেখানে আবার সাইনবোর্ড দিয়ে কার্যালয় চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া গত ১৬ ডিসেম্বর নগরীর শামসুর রহমান রোডে ছাত্রশিবিরের কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়। এর আগে গত ১৫ নভেম্বর খালিশপুরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়। অক্টোবর মাসে নগরী এবং জেলার উত্তর ও দক্ষিণ শাখা ছাত্রশিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। গত ১৬ ডিসেম্বর মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছে। ওই দিন ৩৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। জামায়াত নেতারা জানান, জেলায় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২৬৭টি মামলা ছিল। এর মধ্যে ১৬টি মামলা থেকে নেতাকর্মীরা খালাস পেয়েছেন। আরও ৫০টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। অন্যগুলোও নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া চলছে। দীর্ঘদিন ধরে যারা আত্মগোপনে ছিলেন, তারা সবাই এলাকায় ফিরে দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তারা জনগণের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন। কেউ যাতে বিতর্কিত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়েন, সে ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা না হলেও ইতোমধ্যে খুলনার ৬টি আসনের মধ্যে ৩টিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। এর মধ্যে রয়েছেন খুলনা-৪ আসনে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা কবিরুল ইসলাম, খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও খুলনা-৬ আসনের জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল বলেন, এখন আর দুঃশাসন না থাকায় জামায়াত নির্বিঘ্নে দলীয় সব কর্মকাণ্ড করতে পারছে। তারা দলকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছেন। তিনি জানান, খুলনা-২ ও ৩ আসনে আগে কখনও জামায়াত প্রার্থী দেয়নি। আগামী নির্বাচনে এ দুটি আসনে প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। পরোক্ষভাবে তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। তবে খুলনা-১ আসনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কোনো নেতাকর্মী এখন কারাগারে নেই। আমরা দল গোছানোর কাজ করছি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। এ ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি শুরু করেছি।’ ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসনের মধ্যে বিএনপি তিনটি, জামায়াতে ইসলামী দুটি ও আওয়ামী লীগ একটি আসনে জয়ী হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি একটি আসনে জয়ী হলেও বাকি সময়টা আওয়ামী লীগের দখলে ছিল খুলনার সব সংসদীয় আসন।