র‌্যাম্প বাতিলে হতে পারে টানেলের মতো পরিণতি

২০ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

সমীক্ষা ছাড়াই চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ছয়টি র‍্যাম্প (ওঠা-নামার পথ) বাদ দেওয়া হয়েছে। খোদ সিটি মেয়রের আপত্তিতে সংশয়ে একটির নির্মাণ। এতে ছয় কিলোমিটারেই নেই ওঠার পথ। নগরের মূল অংশের যানবাহন এটি ব্যবহার করতে পারবে না। প্রবেশযোগ্যতা কমলে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় উঠবে না এবং এটি কর্ণফুলী টানেলের মতো লোকসানি প্রকল্প হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) যুক্তি, যত্রতত্র র‍্যাম্প নির্মাণে যানজট বাড়বে বলে বাদ দেওয়া হয়েছে। ৪ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরের লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে সিডিএ। এটি ব্যবহারে আগ্রাবাদে চারটি, টাইগারপাস, নিমতলা, সিইপিজেড ও কেইপিজেড এলাকায় দুটি করে এবং জিইসি মোড়, ফকিরহাট ও সিমেন্ট ক্রসিং মোড়ে একটি করে মোট ১৫টি র‍্যাম্প নির্মাণের কথা। তবে গত ২৮ অক্টোবর সিডিএর নবগঠিত বোর্ডের প্রথম সভায় যানজট বৃদ্ধির অজুহাতে ছয়টি র‍্যাম্প নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। নগরের পলোগ্রাউন্ড সড়ক থেকে টাইগারপাস অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার র‍্যাম্প, আগ্রাবাদের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনে নামার, আগ্রাবাদের এক্সেস রোডে ওঠা-নামার দুটি, কেইপিজেডে নামার একটি এবং সিমেন্ট ক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্টের দিকে নামার র‍্যাম্প নির্মাণ বাদ দেওয়ায় নিউমার্কেট ও বিমানবন্দর থেকে আগ্রাবাদমুখী এবং আগ্রাবাদ থেকে রুবি সিমেন্ট ও কেইপিজেডমুখী যান এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারবে না। সিডিএর বোর্ড সদস্য স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, যত্রতত্র র‍্যাম্প করা হলে আরও বেশি যানজট হবে। এ জন্য কয়েকটি র‍্যাম্প বাদ দেওয়া হয়েছে। এদিকে গত বুধবার নগরের যানজট নিরসন-সংক্রান্ত সভায় জিইসি মোড়ে বাওয়া স্কুলের সামনে নির্মাণাধীন র‍্যাম্প নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তাঁর অভিযোগ, জিইসি মোড়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান দি পেনিনসুলা হোটেলের যাত্রীদের সুবিধা দিতে র‍্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি করতে দেওয়া হবে না। সিডিএ কর্মকর্তারা বলছেন, র‍্যাম্পটি নির্মাণে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও বিরোধিতা করেছিলেন, যা নিয়ে সংস্থার তৎকালীন চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়। বাওয়া স্কুলের সামনে র‌্যাম্প না হলে নগরের আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে হবে। এ ফ্লাইওভারের বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক প্রান্ত ও মুরাদপুরের মোহাম্মদপুর প্রান্ত হয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা ছাড়া বিকল্প পথ থাকবে না। নগরের মূল অংশ কোতোয়ালি, নিউমার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, চকবাজার, সদরঘাট, ডবলমুরিং, খুলশী, পাহাড়তলী, আকবরশাহ থানা এলাকার পতেঙ্গাগামী লোকজনকে ছয় থেকে সাত কিলোমিটার দূরের আগ্রাবাদ গিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে হবে। এতে নগরের মূল অংশের যানজট নিরসনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম বলেন, ‘বাওয়া স্কুলের সামনে র‍্যাম্পটি নির্মাণ করা না হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কার্যকারিতা হারাবে। এটি নির্মাণের বিকল্প নেই।’ জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সিডিএ চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্যরা যাচাই-বাছাই শেষে ছয়টি র‍্যাম্প বাদ দিয়েছেন। বাওয়া স্কুলের সামনে র‍্যাম্পের নির্মাণকাজ বন্ধে কোনো নির্দেশনা পাইনি।’ র‌্যাম্প নির্মাণে সুপারিশ মানেনি সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের আগে সমীক্ষা করেছিল চুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন। এতে নগরের ওয়াসা, টাইগারপাস, বারিক বিল্ডিং, নিমতলী, কাস্টম হাউস, সিইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং ও কাঠগড়ে দুটি করে মোট ১৬টি র‍্যাম্প রাখার সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু সে সুপারিশ মানেনি সিডিএ। ফলে আপত্তির মুখে পড়ে নকশা কাটাছেঁড়া করতে হচ্ছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিদিন ৭৭ হাজার ৪০১টি গাড়ি চলাচলের কথা ছিল। এটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় যেমন কমবে, তেমনি মানুষের কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে। প্রকল্প ঘিরে চট্টগ্রামে আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। সমীক্ষার পরে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচলের জন্য টোল হার চূড়ান্ত করে সিডিএ। র‍্যাম্প ছাড়া গত আগস্টে এক্সপ্রেসওয়েতে পরীক্ষামূলক যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। নগরের মুরাদপুর ও বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে উঠে পতেঙ্গা। আবার পতেঙ্গা থেকে উঠে টাইগারপাস ও লালখানবাজার নামা যায়। আনুষ্ঠানিকভাবে চালু না হলেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল করছে খুবই নগণ্য। ছয়টি র‍্যাম্প কমানো হলে গাড়ি আরও কমবে। চুয়েটের সাবেক উপাচার্য ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কোনো পুনঃসমীক্ষা ছাড়া এভাবে র‍্যাম্প বাদ দেওয়া ঠিক হয়নি। পর্যাপ্ত ওঠা-নামার জায়গা না থাকলে গাড়ি কম চলবে। প্রত্যাশিত গাড়ি না পেলে নির্মাণ খরচ দূরে থাক, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও তোলা কষ্টকর হবে। এটিও কর্ণফুলী টানেলের মতো লোকসানি ভাগ্য বরণ করতে পারে।’ প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে ছয়টি র‌্যাম্প নির্মাণ করা যাবে– এমন ব্যবস্থা রেখে পুরো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করা হবে।