পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা বাতিল
পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির মাধ্যমে যে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়েছিল, তার একটি সমাধানের পথ দেখালো এ রায়। আইনজীবীরা বলছেন, রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানের মূল কাঠামোর অংশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় এর পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে। আজ বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করেন। এছাড়া সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ ও ৪৪ (২) অনুচ্ছেদও বাতিল করা হয়। আদালত বলেন, সংবিধানের গণভোট বিলুপ্তির বিধানটি মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী; ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়েছে। রায়ের প্রধান বক্তব্য ১. তত্ত্বাবধায়ক সরকার: আদালত উল্লেখ করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছিল এবং এটি সংবিধানের মূল কাঠামোর একটি অংশ। ২. সংবিধানের স্থিতিশীলতা: আদালত পঞ্চদশ সংশোধনীর সব ধারা বাতিল না করে কিছু ধারা ভবিষ্যৎ সংসদের জন্য রেখে দিয়েছেন। ৩. গণভোট পুনর্বহাল: দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল হলো। আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া রিটকারীর আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, তাঁরা পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাতিল চেয়েছিলেন। আদালত যেসব ধারা বাতিল করেছেন, সেগুলো একটি ঐতিহাসিক রায় হিসেবে গণ্য হবে। তিনি আরও জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রত্যাবর্তনে বড় বাধা দূর হলো। সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এই রায়কে অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান উল্লেখ করে বলেন, আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে সংবিধানের মূল কাঠামোর অংশ হিসেবে রায় দিয়েছেন। তিনি আশা করেন, আপিল বিভাগে রায় বহাল থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। ঐতিহাসিক পটভূমি আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে এবং জাতীয় চার মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে ফিরিয়ে আনে। তবে, তৎকালীন সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে অন্যান্য ধর্মের সমমর্যাদা নিশ্চিত করা হয়। রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রভাব এই রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হলো। আইনজীবীরা বলছেন, আগামী জানুয়ারিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে রিভিউ আবেদনের শুনানি হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। এই রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।