এবার জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন হচ্ছে
বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধানসহ বিভিন্ন বিষয় সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এ ছয় কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ করবে সরকার। ছয় কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের মতামত নিয়ে ঐকমত্য স্থাপনে কাজ করবে নতুন কমিশন। যার মূল লক্ষ্য হবে সবার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময় চূড়ান্ত করা। এই কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এ কমিশন গঠনের কথা জানান। ড. ইউনূস বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের কাজ হবে রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপন হবে, সেগুলো চিহ্নিত করা এবং বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করা।’ কমিশনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। কমিশন প্রয়োজন মনে করলে নতুন সদস্য যুক্ত করতে পারবে। প্রথম ছয়টি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগামী মাসেই জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন কাজ শুরু করতে পারবে বলে প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নতুন কমিশনের প্রথম কাজ হবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেসব সিদ্ধান্ত জরুরি, সেসব বিষয়ে তাড়াতাড়ি ঐকমত্য সৃষ্টি করা এবং সবার সঙ্গে আলোচনা করে কোন সময়ে নির্বাচন করা যায়, সেই ব্যাপারে পরামর্শ চূড়ান্ত করা। তিনি আরও বলেন, আমাদের সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি বাস্তবায়নে প্রতিটি কমিশনই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর প্রধানত নির্ভর করছে আগামী নির্বাচন প্রস্তুতি ও তারিখ। ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। তাদের সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। নতুন ভোটারদের যুক্ত করা, ভুয়া ভোটার বাদ দেওয়া এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া উন্নত করতে নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে। গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। সেগুলো হলো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর প্রধানদের নামও ঘোষণা করেন। কমিশনগুলো পূর্ণাঙ্গ করতে তিন সপ্তাহ সময় লেগে যায়। ৩ অক্টোবর পাঁচটি কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি হয় ৭ অক্টোবর। ১৭ অক্টোবর আরও চারটি সংস্কার কমিশন গঠনের কথা জানায় সরকার। সেগুলো হলো স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। ১৮ নভেম্বর এ চারটিসহ মোট পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অন্যটি হলো স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এসব কমিশনও কাজ শুরু করেছে। কমিশনগুলোকে ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেদন দিতে হবে।