দেশব্যাপী শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত
১৪ ডিসেম্বর, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম শোকাবহ এবং মর্মান্তিক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসররা বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। বিজয়ের ঠিক দুই দিন আগে, ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনী পরিকল্পিতভাবে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। পরে, মিরপুরের ডোবা-নালা কিংবা রায়েরবাজার ইটখোলার মতো নির্জন স্থানে তাদের হত্যা করে ফেলে রাখা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী এবং অন্যান্য পেশার কৃতী মানুষ। এ হত্যাযজ্ঞে প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী প্রাণ হারান, যা পুরো জাতিকে হতবিহ্বল করে দেয়। স্বাধীনতার পর শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। ১৯৯১ সালে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নির্মাণ শুরু হওয়া শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ১৯৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়। প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর, এ দিনটি গভীর শ্রদ্ধা এবং শোকের সঙ্গে পালন করা হয়। এ দিন সকালে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে শহিদ পরিবারের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সর্বস্তরের জনগণ তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দিনটি বাঙালি জাতির জন্য শুধু শোকের নয়, একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধে উদ্বুদ্ধ করার দিন। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, স্বাধীনতার জন্য তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। জাতি তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এ প্রতিজ্ঞা করে যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অক্ষুণ্ণ রাখার লড়াই অব্যাহত থাকবে।