আবারো মিয়ানমারের সীমান্তে উদ্বেগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
মিয়ানমারের চলমান উত্তেজনা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত অঞ্চল এখন আরাকান আর্মির দখলে। এর ফলে বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারে চলমান বিদ্রোহ ও অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ট্রলার চলাচল শুরু হলেও, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর ফলে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং নাফ নদীতে কোস্টগার্ডের নজরদারি আরও কঠোর করা হয়েছে। টেকনাফ সীমান্তের স্থানীয়রা জানান, তারা ইতিমধ্যেই লাখ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বহন করছে, এবং নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে দেখতে চায় না। স্থানীয়দের দাবি, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংকটময় হয়ে উঠেছে। তাঁরা আরো বলেন, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) যেন আরো কড়া অবস্থান নেয়, কারণ সীমান্ত এলাকা এখনও অরক্ষিত এবং যে কোনো সময় রোহিঙ্গা ঢুকে যেতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহেসান উদ্দিন জানান, আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে, তবে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বড় কোনো অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হয়েছে, তবে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন যে, মিয়ানমারের বিদ্রোহের ফলে কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকায় অস্থিতিশীলতা বাড়বে। এমন পরিস্থিতির মাঝেও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে ট্রলার চলাচল শুরু হয়েছে, যা সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছে। বৃহস্পতিবার, দুটি ট্রলার জরুরি খাদ্যপণ্য এবং সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের নিয়ে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। তবে, সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি থাকলেও সীমান্ত এলাকায় নতুন সংকটের আশঙ্কা তাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, তাদের জীবনে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা প্রবেশ করলে, পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যাবে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যেতে পারে, যার ফলে স্থানীয়দের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশ সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসময় আরও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যাতে সীমান্তে কোনো অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে। তারা স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেছেন যে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ফলে, বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের নতুন করে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা বেড়েছে। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। তবে, স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগের কারণ রয়েছে, এবং তারা আরো কঠোর নজরদারি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা দাবি করছে।