বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমেরিকার গভীর উদ্বেগ
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে আমেরিকা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন পরিচালক জন কিরবি গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, “আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সরাসরি বিষয়টির উপর নজর রাখছেন।” কিরবি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। বাংলাদেশি নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় আমরা বারবার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরেছি। অন্তর্বর্তী সরকারও এই বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” বাংলাদেশে ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এখনও কারাগারে বন্দি। তাঁর আইনজীবী পর্যন্ত হামলার শিকার হয়েছেন। মন্দির এবং সংখ্যালঘুদের উপর নিরবচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা ক্রমশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। জন কিরবি জানিয়েছেন, এই বিষয়গুলো আমেরিকার অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। ভারতও হিন্দু সংখ্যালঘুদের রক্ষায় কঠোর বার্তা দিয়েছে। তবে বাংলাদেশে ধর্মীয় নির্যাতনের বিষয়টি আরও আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন কর্মকর্তা লিসা কার্টিস সম্প্রতি জানিয়েছেন, “শেখ হাসিনা কড়া হাতে সন্ত্রাসবাদ দমন করেছিলেন এবং উগ্রপন্থার পুনরুত্থান রোধ করেছিলেন। তাঁর সময় বাংলাদেশের নাগরিকরা শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।” ২০১৬ সালের হলি আর্টিজান হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ দমনে শেখ হাসিনার ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিল। বর্তমান পরিস্থিতি সেই অর্জনগুলো নষ্ট করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।” বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি শুধু দেশটির অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয় বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্যও অশনি সংকেত। মার্কিন প্রশাসন এই সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমেরিকা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তি যে উদ্বিগ্ন তা স্পষ্ট। শেখ হাসিনার সময়কালে স্থিতিশীলতা এবং সন্ত্রাসবাদ দমন যেমন প্রশংসিত হয়েছিল, বর্তমান সংকট সেই অর্জনগুলোকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং দেশের স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ। অন্তর্বর্তী সরকারকে এই দায়িত্ব পালনে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।