সরকার জনগণের ভাষা বুঝতে পারছে না: নুর
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের ভাষা বুঝতে পারছে না। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ না করে, তারা তাদের চায়ের আড্ডার লোকদের নিয়ে সরকার গঠন করছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন না করে, রাজনৈতিক দলগুলোর কথা না শুনে, তারা তাদের মত কাজ করছে। আমরা আগেও বলেছি, আগে সংস্কার তারপর নির্বাচন। কিন্তু সেক্ষেত্রে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। তারা যদি সবার কথা না শুনে, নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠী কিংবা সার্কেলের কথা শুনে, তাহলে সবাই সরকারকে সন্দেহ করবেই। শুক্রবার বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ আয়োজিত ‘ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্য বিরোধী জাতীয় যুব সমাবেশে’ এসব কথা বলেন নুরুল হক নুর। শুক্রবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি মোড়ে এসে শেষ করে। যুব সমাবেশে বিভিন্ন যুব সংগঠনের জাতীয় নেতৃবৃন্দ সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে নুরুল হক বলেন, উপদেষ্টাদের বুঝতে হবে তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা কী। জনগণের পালস না বুঝে কাজ করলে জনগণ সরকারের বিপক্ষে চলে যাবে। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, যারা ক্ষমতায় ছিল তারা তাদের নিজেদের কথা চিন্তা করেছে, নিজেদের দলের কথা চিন্তা করেছে। ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। তাই রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারও জরুরি। তিনি আরও বলেন, ‘অর্ন্তবর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করতে ভারতের আগ্রাসন ও আধিপত্য চলছে। ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের জন্য দায়ী ভারত। আওয়ামী লীগের মতো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যবহার করতে পারবে না, তাই বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র করছে ভারত। পরিকল্পিতভাবে ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। আমরা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোকে আহ্বান জানাবো, তারা যেন তদন্ত করে। বাংলাদেশের কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেনি, যা ঘটেছে সেগুলো রাজনৈতিক ঘটনা। ভারত যদি বাংলাদেশের অভিন্ন নদীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত না দেয়, তিস্তার ন্যায্য হিস্যা না দেয়, তাহলে চীনের সঙ্গে তিস্তার চুক্তি করা। ঢাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কী কী চুক্তি রয়েছে সেগুলো প্রকাশ করতে হবে। আমরা দেখেছি সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করে। আমরা বিজিবিকে বলবো, বিএসএফ একজনকে গুলি করলে, আপনারা দুইজনকে গুলি করবেন। কোনোপ্রকার ছাড় দেওয়ার সুযোগ নাই। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ডাকসুতে আমাদের ওপর কুখ্যাত সাদ্দাম ও সনজিতের নেতৃত্বে এদেশীয় ‘র’ এর এজেন্টরা হামলা করে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানালে আমরা প্রতিবাদ করি। তখন আমাদের ৬৪ জন সহযোদ্ধাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ দেশের রাজপথে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই আমরাই শুরু করি। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা টানা লড়াই করেছি। ২০২৪ সালে আমাদের সভাপতি নুরুল হক নুর আটক হন। অসংখ্য সহযোদ্ধা ত্যাগ শিকার করেছেন। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের বীজ ২০১৮ সালে আমরাই বপন করেছি। কিন্তু যে সরকার গঠিত হলো, এখানে সকল বিপ্লবীদের প্রতিনিধি কোথায়? ১৯৭১ এর পরে যেভাবে একপাক্ষিক সরকার গঠিত হয়েছিল। ঠিক এবারও তাই হয়েছে। বিপ্লব বেহাত হয়ে গেছে। অন্যথায় শহীদের তালিকা কোথায়, শহীদ পরিবারের ক্ষতিপূরণ কোথায়, আহতদের কেন সুচিকিৎসা হচ্ছে না? কেন শেখ পরিবার ও আওয়ামী হাইকমান্ডের কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছে না? রাশেদ খাঁন আরও বলেন, বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদসহ সকল দল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের বিষয়ে তাদের অবস্থান ক্লিয়ার করেছে। কিন্তু কেন সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করছে না? আমাদের স্পষ্ট কথা, গণহত্যার বিচারের আগে নামে-বেনামে, ডামি-মামি, স্বতন্ত্র কোনভাবেই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ১৪ দলের প্রেতাত্মাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, সঞ্চালনা করেন সহসভাপতি রাহুল ইসলাম, এছাড়াও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, যুগ্ম-সাধারণ হাসান আল মামুন, বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, সহ-সভাপতি শাকিল আহমেদ তিয়াস, হোসাইন নুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল মুন, অর্থ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খালিদ হাসান, মহানগর দক্ষিণ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নাজিমউদ্দীন, উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান প্রমুখ।