রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানিতে ২৫% শুল্ক আরোপের সুপারিশ
পরিশোধিত ও অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। স্থানীয় বাজারে যৌক্তিক মূল্যে বিকল্প ভোজ্যতেল হিসেবে সরবরাহ বাড়াতে ও ভর্তুকি মূল্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সরবরাহ করার জন্য এ সুপারিশ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত চিঠি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পাঠানো হয়েছে। ট্যারিফ কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চিঠিতে ট্যারিফ কমিশন রাইস ব্র্যান এবং অপরিশোধিত ও পরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেল— এ তিনটি পণ্য রপ্তানিতেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আগের দেওয়া শর্ত আরোপের সুপারিশ করেছে। কমিশন বলেছে, বর্তমানে রাইস ব্র্যান বা কুড়া রপ্তানির ওপরে ২৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এখন রাইস ব্র্যানের সঙ্গে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত উভয় ধরনের রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানিতে একই হারে অর্থাৎ ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে। স্থানীয় বাজারে যৌক্তিক মূল্যে পরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে এই শুল্ক আরোপ করা প্রয়োজন। তাছাড়া আসন্ন রমজান উপলক্ষে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে সার্বিকভাবে স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও দামে স্বস্তি তৈরি হবে। চিঠিতে ট্যারিফ কমিশন জানায়, দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ২২ থেকে ২৩ লাখ টন। প্রায় সমপরিমাণ অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি করে তা পরিশোধনের মাধ্যমে স্থানীয় এ চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ পূরণ করা হয়। অন্যদিকে, দেশ উৎপাদিত কুঁড়া থেকে বছরে ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টন অপরিশোধিত এবং সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টন পরিশোধিত কুঁড়ার তেল পাওয়া সম্ভব। এই পরিমাণ কুঁড়ার তেল দিয়ে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ করা যায়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দর বাড়ার কারণে স্থানীয় দামও ঊর্ধ্বমুখী। এ তথ্য উল্লেখ করে কমিশন বলেছে, এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কুঁড়ার তেলের সরবরাহ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। রাইস ব্র্যান মূলত ধানের খোসা ও সাদা চালের মাঝখানের তৈলাক্ত স্তর, যা কুঁড়া নামেও পরিচিত। এই ব্র্যান প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে রাইস ব্র্যান বা কুঁড়ার তেল পাওয়া যায়, যা বিশ্বে জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যসম্মত রান্নার তেল হিসেবে পরিচিত। দেশে বছরে সাড়ে পাঁচ কোটি টন ধান উৎপাদন হয়। এ ধান থেকে ৬ থেকে ৭ লাখ টন রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদন সম্ভব। বাংলাদেশ রাইস ব্র্যান অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, দেশে মোট ২০টি ব্র্যান অয়েল মিল রয়েছে। এসব মিলের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৪ লাখ ৫৩ হাজার টন, যা পরিশোষণ শেষে বছরে ২ লাখ ৮৬ হাজার টন কুঁড়ার তেল পাওয়া যায়। ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে কুড়ার তেলের কাঁচামাল রাইস ব্র্যান এক সময় রপ্তানি হতো। তাতে স্থানীয় মিলগুলো কাঁচামাল সংকটে পড়ে। এ কারণে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে রাইস ব্র্যান রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ হারে রপ্তানি শুল্ক আরোপ করা হয়। এতে রাইস ব্র্যান রপ্তানি নিরুৎসাহিত হলেও অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রপ্তানি হয়ে আসছে। গত ২০২২–২০২৩ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৭ হাজার ২৮৯ টন এবং ২০২৩–২০২৪ অর্থবছরে ভোমরা ও হিলি স্থল বন্দর দিয়ে ৬৪ হাজার ১৯ টন অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানি হয়েছে। জানা গেছে, টিসিবির মাধ্যমে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর কাছে ভর্তুকি মূল্যে কুঁড়ার তেল সরবরাহ করা হয়। তবে উচ্চ মূল্যে অপরিশোধিত রাইস ব্রান তেলের রপ্তানি উৎসাহিত হওয়ায় স্থানীয় মিলগুলো টিসিবিকে রাইস ব্র্যান তেল সরবরাহে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। এতে চাহিদা অনুসারে এই তেল পাচ্ছে না টিসিবি। এ কারণে টিসিবি অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একই ধরনের আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনও। এক চিঠিতে সমিতিটি বলেছে, অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে পোল্ট্রি ও মাছের ফিড উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ সহজলভ্য হবে। টিসিবি ও ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে এবং বর্তমান ভোজ্যতেল বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন।