৮০ বেশি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন ময়নুল আহমেদ
চার বছর আগেও দৌড়ের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল না। ৫’শ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ১ কিলোমিটারের বেশি দৌড়ানোর কথা চিন্তাও করতেন না। খেলাধুলা করতে পছন্দ করতেন। ভালো ফুটবল খেলতেন। এটাই ছিল তার প্রতিদিনকার রুটিন। স্থানীয় এক বড় ভাইয়ের উৎসাহে ম্যারাথন দৌড় শুরু করেন। অদম্য আগ্রহ্য আর লক্ষ্য অর্জনে নিয়মিত পরিশ্রমে চার বছরের ব্যবধানে আজ তিনি একজন সফল দৌড়বিদ। অনায়াসেই দৌড়ান ৫০ কি: মি: ম্যারাথন। ম্যারাথন ইভেন্টে অংশ নিয়ে চ্যম্পিয়নসহ ৩য় স্থানের মধ্যে ফিনিশ করেছেন লক্ষমাত্রা। অর্জন করেছেন সম্মাননা ক্রেস্ট, প্রাইজমানিসহ অসংখ্য মেডেল। কৃতি এই এ্যথলেট (দৌড়বিদ) ময়নুল আহমেদ। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের পুত্র। অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র। দৌড়ের মাধ্যমে সারাদেশে আখাউড়ার সুনাম ছড়িয়ে দিচ্ছেন। বয়ে আনছেন সম্মান, খ্যাতি। আখাউড়ার তরুন সমাজসহ সাধারণ মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন ২৫ বছর বয়সী এই যুবক। ভালোবেসে বন্ধু সহপাঠীরা তার নাম দিয়ে আখাউড়া এক্সপ্রেস। পৌরশহরের শহীদ স্মৃতি কলেজ মাঠে বসে কথা হয় ময়নুল আহমেদের সাথে। দৌড়ে যতটা সাবলিল কথা বলায় ততটাই আড়ষ্ট। অনেকটা লাজুক স্বভাবের ময়নুল কথাও বলেন আস্তে আস্তে। ময়নুল আহমেদ বলেন, ২০২১ সালে মাহমুদ নামে দিকে স্থানীয় এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ম্যারাথন সম্পর্কে অবগত হই। তিনি উৎসাহ দিয়ে ম্যারাথন শুরু করার পরামর্শ দেন। ওই বড় ভাই জেলা শহরের রানার্স কমিউনিটির এডমিন নিবির হোসেনের কাছে নিয়ে যান। নিবির হোসেনের পরামর্শে জীবনে প্রথম সিলেটে ২১ কি: মি: ম্যারাথনে অংশ নিই। দেড় হাজারেরও বেশি দৌড়বিদ ওই ইভেন্টে অংশ নেয়। কোন রকম প্রস্তুুতি ছাড়াই ১ ঘন্টা ৩৯ মিনিটে ১৭ নম্বর পজিশন নিয়ে দৌড় শেষ করি। সেই থেকেই ম্যারাথন শুরু। তারপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় ম্যারাথনে অংশ নিতে থাকি। ময়নুল আহমেদ জানান, এখন পর্যন্ত (ডিসেম্বর ১০) ৮০টির বেশি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন। গত ১ নভেম্বর সিলেটের শমশের নগরে ৫০ কিলোমিটার ম্যারাথনে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। এর আগে বান্দরবানে ২৫ কিলোমিটার ম্যারাথনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। গত ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে ৪২ কিলোমিটার এলিট ম্যারাথনে ১ হাজার প্রতিযোগির মধ্যে প্রথম রানার আপ হয়েছি। এর আগে ৮ নভেম্বর নরসিংদি জেলার রায়পুরা উপজেলায় ৪২ কিলোমিটার ম্যারাথনে অংশ নিই। সেখানেও আমি ২য় হই। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় ম্যারাথনে অংশ নিয়েছি। বেশির ভাগ কম্পিটিশনেই প্রথম থেকে তয় স্থানের মধ্যে দৌড় শেষ করেছি। শুরুর দিকে ময়নুল পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে তেমন উৎসাহ পাননি। বাবা মা ম্যারাথন করতে বারণ করতেন। তারা বলতো ম্যারাথন করলে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাবে। তখন বাবা মাকে বুঝাতে বেশ সময় লেগেছে। তারপর থেকে মা-বাবা উৎসাহ যুগিয়েছেন। ময়নুল আহমেদ আরও বলেন, দৌড়ের প্রতি আগ্রহ না থাকলেও ম্যারাথন শুরু করার পর দৌড়ানোর প্রতি ভালো লাগা শুরু হয়। দৌড়াতে কোন ক্লান্তি আসে না। দিনটা খুবই ভালো যায়। মাদকসহ খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারছি। তার সহজ সরল কথা, নিজের সুস্থতার জন্য দৌড়ান। চারপাশের মানুষকে সচেতন রাখার জন্য দৌড়াই। দৌড়ের কারণে কোন অসুবিধা হয়না জানিয়ে ময়নুল বলেন, তাকে কখনও ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি। হার্টবিট খুব ভালো আছে। দৌড়ানো বা ব্যায়াম করলে শারীরিক সক্ষমতা বাড়ে, হার্টবিট ভালো থাকে। কর্মক্ষমতা বাড়ে। ম্যারাথন ইভেন্টে রেজিঃ ফি, যাতায়াত খরচ ইত্যাদি কীভাবে ম্যানেজ হয় এমন প্রশ্নে ময়নুল আহমেদ জানান, ২০২১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মাসুম নামে এক ভাইয়ের সাথে পরিচয় হই। তিনি ২০২১ সালের বিভিন্ন ম্যারাথনে অংশ নেওয়ার রেজিষ্ট্রেশন ফি সাপোর্ট দিয়েছেন। আরেক রানার নাজমুল হক ভাই ২০২৪ সালের রেজিষ্ট্রেশন ফি, যাতায়াত পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তাই তার বিশেষ খরচ হয় না। বরং মেডেল, ক্রেস্টসহ নগদ প্রাইজমানি পাই। তরুন প্রজন্মের প্রতি ময়নুলের আহবান, ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসে বেশি সময় না দিয়ে নিজের জন্য প্রতিদিন এক ঘন্টা হলেও ব্যয়াম করুন। হাঁটুন, দৌঁড়ান। জানতে চাইলে ময়নুল আহমেদের বড় ভাই মোঃ রাকিব আহমেদ বলেন, পরিবার থেকে আমরা সব সময় ময়নুলকে উৎসাহ দিই। ভবিষ্যতে দিব। সে ভালো করায় আমরা আনন্দিত। এ ব্যপারে দক্ষিণ ইউনিয়ন প্রবাসী কল্যাণ সংগঠনের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ইব্রাহিম ভূইয়া লিটন বলেন, ময়নুল আহমেদ ম্যারাথনের মাধ্যমে সারাদেশে আখাউড়ার নাম ছড়িয়ে দিচ্ছে, আখাউড়ার সুনাম বয়ে আনছে। এজন্য আমরা আনন্দিত। আমি তার সফলতা কামনা করি। আখাউড়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার শরীর চর্চা মূলক সংগঠন চিরসবুজ সংঘের সদস্য সচিব দুলাল ঘোষ জয় বলেন, ২০১৮ সালে চিরসবুজ সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনের মাধ্যমে আমরা ১০/১৫ জন তরু-যুবক ভোর সকালে হাঁটা, দৌড়, ব্যায়াম ইত্যাদি করে আসছি। ২০২১ সালে আখাউড়ায় প্রথম ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ময়নুল আহমেদ অংশ নেয়। এরপর ময়নুল সহ আমি নিজেও বিভিন্ন ম্যারাথন ইভেন্টে অংশ নেই। প্রতিটি ইভেন্টেই ভালো ফলাফল করে ময়নুল। সে বিভিন্ন ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সারা বাংলাদেশে আখাউড়ার সুনাম বয়ে আনছে। সে তরুন সমাজকে অনুপ্রানিত করছে। আমি ময়নুলের সফলতা কামনা করি।