তালেবানকে স্বীকৃতি দিচ্ছে রাশিয়া
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। ইতিমধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও নিয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডুমায় মস্কোর নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে তালেবানকে অপসারণের পথ তৈরি করতে একটি আইনের পক্ষে ভোট হয়েছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়ার সংসদ এ সংক্রান্ত আইনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এর ফলে নিষিদ্ধ তালিকা থেকে তালেবান বাদ হলে স্বীকৃতি দেওয়ার পথও তৈরি হবে। রাশিয়ার সংসদের নিম্নকক্ষ ডুমায় তিনটি প্রয়োজনীয় ধাপের প্রথমটিতে বিলটি অনুমোদন হয়েছে। ২০১৭ সালে রাশিয়া তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে তালিকাভুক্ত করে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তালেবানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বেশ উষ্ণ হয়েছে। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে তালেবান। তখন চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে দেশটি থেকে বিদেশি সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর থেকে কোনো দেশই তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে রাশিয়া ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত জুলাইয়ে তালেবানকে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে একটি কার্যকর মিত্র হিসাবে উল্লেখ করেন। আফগানিস্তান থেকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হুমকি মোকাবিলায় তালেবানের ভূমিকা রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা তাদের নারী অধিকারবিরোধী নীতিমালা। আফগানিস্তানে নারীদের শিক্ষার সুযোগ সীমিত করা, তাদের চলাফেরায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কাজের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। এই অবস্থায় রাশিয়ার পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। আফগানিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের ইতিহাস জটিল। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত সেনারা আফগানিস্তানে প্রবেশ করে। কিন্তু মুজাহিদীন যোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে এক দশকের মাথায় তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। সেই যুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজার সোভিয়েত সেনা প্রাণ হারায়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে রাশিয়া মধ্য এশিয়ায় নিজের প্রভাব বিস্তারের নতুন সুযোগ খুঁজছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার এই উদ্যোগ বিরোধপূর্ণ হতে পারে। ফলে, রাশিয়ার এই পদক্ষেপ তালেবানের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দরজা খুলে দেবে নাকি নতুন বিতর্ক তৈরি করবে এই মুহূর্তে তা বুঝে ওঠা কঠিন।