ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দিল্লীর ভিসা সেন্টার সড়ানোর অনুরোধ

১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৫:১০ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর চলমান নির্যাতন এবং ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরির ঢাকা সফরের প্রেক্ষাপটে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সোমবার, বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ বৈঠকে একদিকে বাংলাদেশের সমাজে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়, অন্যদিকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নানা দিকও উঠে আসে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে ভিসা সেন্টার স্থানান্তরের অনুরোধ এ বৈঠকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের কাছে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুরোধ রাখেন। তিনি ইইউকে অনুরোধ জানান, তাদের ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে ঢাকা বা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তর করার জন্য। ইউনুসের মতে, ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা নিতে পারেন না, ফলে তাঁদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। ইউনুস বলেন, "এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পাচ্ছে না। যদি ভিসা সেন্টার ঢাকা বা অন্য কোনো প্রতিবেশী দেশে চলে আসে, তবে এটি বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ের জন্যই উপকারী হবে।" বৈঠকে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, ইতিমধ্যেই বুলগেরিয়া বাংলাদেশিদের জন্য তাদের ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে। তিনি অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোকেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান। সংখ্যালঘু হিন্দু নির্যাতন এবং ভারতের কড়া বার্তা বাংলাদেশে সম্প্রতি সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর বাড়তে থাকা নির্যাতনের ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভারত সরকার এ বিষয়টি নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি ঢাকা সফর করছেন এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ পরিস্থিতিতে, ইউনুস তাঁর বক্তব্যে বলেন, "বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপকভাবে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। আমরা এই মিসইনফরমেশন রুখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা কামনা করি।" তিনি আরও বলেন, "গোটা দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, অত্যাচার এবং শোষণের ঘটনা ঘটছে, যা গত ১৬ বছরে আরও বেড়েছে।" গণঅভ্যুত্থান এবং সরকারের প্রতি অভিযোগ জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান এবং সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়েও আলোচনা উঠে আসে। ইউনুস বলেন, "গণঅভ্যুত্থান এবং সরকার বিরোধী আন্দোলন একটি বড় সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা। শেখ হাসিনা এবং তাঁর সহযোগীরা দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন এবং তারা ব্যাপক অর্থ পাচার করেছেন।" বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্য এবং বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতির সৃষ্টির জন্য প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে ভিসা সেন্টার স্থানান্তরের অনুরোধ একটি নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। ভারতীয় সরকারের সমালোচনা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে মিসইনফরমেশন মোকাবিলায় সাহায্য করার আহ্বান শোনা গেছে। বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং গণঅভ্যুত্থান দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এখন সময় আসছে, বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে এসব সমস্যা সমাধান করার।