যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের ঘোষণা

১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৫:০১ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির যে আইন প্রচলিত রয়েছে তা বাতিল করবেন। এই ঘোষণা মার্কিন রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর বিরুদ্ধে গিয়ে নেয়া হতে পারে, কারণ এই সংশোধনীতে বলা হয়েছে, "যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সব ব্যক্তিই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।" তবে ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনায় জানিয়েছেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিয়মটি পরিবর্তন করতে তিনি নির্বাহী আদেশ জারি করবেন। এছাড়া, ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে সংঘটিত দাঙ্গায় জড়িতদের ক্ষমা করারও ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "এই মানুষগুলো নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে" এবং দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই তাদের জন্য ক্ষমার দিকে নজর দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, দেশের ভেতরে জন্মগ্রহণ করা শিশুকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়, তা সত্ত্বেও তার বাবা-মা যদি অন্য কোনো দেশের নাগরিক হন। ট্রাম্প এই নিয়মটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর মতে, এই নিয়মের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সন্তান জন্ম দিয়ে নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে শিশু অবস্থায় আসা নথিপত্রবিহীন কিছু অভিবাসীকে সহায়তা দেয়ার জন্য তিনি ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। তবে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিধান বাতিলের বিষয়ে তাঁর অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী জো বাইডেনের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলাকালে ট্রাম্প সমর্থকরা ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিল। হামলার সময় কিছু হামলাকারী অস্ত্রধারী ছিল এবং তারা ভবনের ভিতরে তাণ্ডব চালায়। এ ঘটনায় পাঁচজন নিহত হন, যাদের মধ্যে এক পুলিশ সদস্যও ছিলেন। ট্রাম্প ক্যাপিটল দাঙ্গায় জড়িতদের জন্য ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি এটি বাস্তবায়ন করবেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ মার্কিন সংবিধান এবং আইনজীবীদের মতে সংবিধানবিরোধী হতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, যদি ট্রাম্প এই আদেশ বাস্তবায়ন করেন, তবে তা গুরুতর আইনগত জটিলতার সৃষ্টি করবে, কারণ সংবিধানে যে বিধান রয়েছে তা পরিবর্তন করা সহজ নয়। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের ব্যবস্থা অনেক অভিবাসীর জন্য একটি সহজ পথ ছিল, যার মাধ্যমে তারা নাগরিকত্ব লাভ করে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বৈধ বসবাসের অনুমতি পাওয়া যায়। ট্রাম্পের এই ঘোষণার ফলে এমন অভিবাসীদের জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত এবং ক্যাপিটল দাঙ্গায় জড়িতদের ক্ষমা ঘোষণার পরিকল্পনা মার্কিন রাজনীতিতে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে তার জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থা এবং সংবিধানকে নতুনভাবে পরীক্ষা করতে বাধ্য করবে।