উমাইয়া খেলাফতের রাজধানী দখলে কেন এত বিপ্লব…
পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস, ঐহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক উপাখ্যানের রাজধানী সিরিয়ার দামেস্ক। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকে বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, রাজনীতি, শিল্প ও সাহিত্যের কেন্দ্র প্রাচীন এই শহর। উমাইয়া খেলাফত এবং বিভিন্ন সভ্যতার কেন্দ্র ছিল দামেস্ক। অবস্থান দামেস্ক শহরটি দক্ষিণ সিরিয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৯০ মিটার উপরে একটি মালভূমিতে অবস্থিত। দামেস্কের প্রশাসনিক এরিয়া ২৬ হাজার বর্গ মাইলজুড়ে। মূল শহরের আয়তন ১০৫ বর্গ কিলোমিটার। শহরটি উত্তর ও পশ্চিমে কালামউন পর্বতমালা এবং পূর্বে লেবানন পর্বতমালা দ্বারা বেষ্টিত। এর দক্ষিণ ও পূর্বে হাওরান এবং গোলানের আগ্নেয়গিরির উচ্চভূমি রয়েছে। মাঝখানে বারাদা নদী পুরাতন দামেস্ককে আধুনিক দামেস্ক থেকে পৃথক করেছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে শহরটি ট্রানজিট পয়েন্ট ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি নাকবা এবং ১৯৭৬ সালের যুদ্ধের পরে। প্রথম ভাষণ মসজিদেই দিলেন আল জুলানি জনসংখ্যা সিরিয়ার সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস অনুসারে ২০২৩ সালে দামেস্কের জনসংখ্যা দুই মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। শহরটিতে খ্রিস্টান, ইহুদি ছাড়াও সুন্নি, কুর্দি,শিয়া, শিয়া ইসমাইলিসহ বেশ কয়েকটি সম্প্রদায় বসবাস করেন। নামকরণ দামেস্ক শহরের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, দামাস্কাস অ্যাসিরীয় উৎসের একটি শব্দ, যার অর্থ একটি সমৃদ্ধ বা সমৃদ্ধ দেশ। কেউ বলেন, শাম বিন নূহ আ. -এর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল ‘শাম’। এছাড়াও শাম বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন— যাত আল ইমাদ, ইরামাযাতুল ইমাদ, হারব, নুরাম, দুররাতুশ-শারক, শামাতুদ দুনইয়া, শাম শারিফ, দামেস্কা, দিমাস্ক, জেসমিনের শহর— ইত্যাদি নামে পরিচিত। ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব ৯ হাজার বছরের পুরোনো ঐহিত্যবাহী শহর দামেস্ক। এর ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, তুফানের পর হজরত নূহ আ. যখন জাহাজ থেকে অবতরণ করে হিসমা পর্বত থেকে নিচের দিকে তাকালেন, তখন তাঁর দৃষ্টি জালাব ও দিসান নামক দুটি নদীর মাঝখানে অবস্থিত পাহাড়ে পড়ে। তখন তিনি একে শহর হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি দামেস্ক শহরকে গড়ে তোলেন। শহরটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সভত্যার রাজধানী ছিল। ৬৪ খ্রিস্টপূর্ব সময়ে রোমান নেতা পম্পি দ্য গ্রেট সিরিয়ার পশ্চিম অংশ দখল করেন। এরপর রোমানরা দামেস্ক শহরটি দখল করে। এ সময় শহরটি প্রচুর সমৃদ্ধি অর্জন করে। এই শহরে দেশটির বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ থেকে আসা পালমিরা এবং পেট্রা, সিল্ক রোড। এছাড়াও এর বাণিজ্যিক রুটগুলো চীনের সাথে সংযুক্ত।শহরটিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর রয়েছে। ইসলামি যুগ উমাইয়া খলিফারা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এটি উমাইয়া খেলাফতের রাজধানী ছিল। উমাইয়া শাসনের অবসান, আব্বাসীয়দের হাতে দামেস্কের পতনের আগ পর্যন্ত শহরটি ইসলামী খেলাফতের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। উমাইয়াদের অধীনে আসার পর থেকে শহরটি আব্বাসীয়, ফাতেমি, সেলজুক এবং আইয়ুবি শাসনের কেন্দ্র ছিল। খেলাফতের অধীনে থাকা অন্যান্য অঞ্চলকে তারা এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী দামেস্ক থেকে তার বিজয়ের যাত্রার সূচনা করেন। যা মিশর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আইয়ুবী ও মামলুক শাসনামলে শহরটি সমৃদ্ধি লাভ করে। তবে উসমানীয় শাসনামলে কিছুটা জৌলুস হারায়। ফরাসী শাসন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৯১৮) মিত্র তুরস্ক এবং জার্মানি দামেস্ক শহরকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে। ১৯১৮ সালে সিরিয়ান আরব বিদ্রোহী বাহিনী ব্রিটিশদের সহায়তায় এটি দখল করে। ১৯২০ সালের মার্চ মাসে দামেস্ক শহরকে স্বাধীন আরব সরকারের রাজধানী ঘোষণা করা হয়। তবে একই বছরের জুলাই মাসে ফরাসি বাহিনীর দখল করে শহরটি। ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত এখানে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত ছিল। সিরিয়ায় বিপ্লব ২০১১ সালে সিরিয়ার রাজধানীতেও প্রভাব পড়ে আরব বসন্তের। ২০১১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দামেস্কের কেন্দ্রস্থলে স্বৈরাচার বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ দমনে আসাদ বাহিনী সাধারণ জনগণের ওপর হামলা চালায়। এরপর ১৩ বছরে কয়েক দফায় দামেস্কে বিক্ষোভ ও বিক্ষোভ দমনের চিত্র দেখা গেছে। সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর ২০২৪-এ হায়াত আল শামের যোদ্ধাদের হাতে পতন ঘটে দীর্ঘ দিনের স্বৈরাচার আসাদ সরকারের শাসনের। সূত্র : আল জাজিরা