বিমান দুর্ঘটনায় বাশার আল-আসাদ কী সত্যিই মারা গেছে ?
রাজধানী দামেস্ক বিদ্রোহীদের প্রতিরোধের মুখে পালিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। কিন্তু বর্তমানে তিনি কোথায় রয়েছেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। গুঞ্জন ছড়িয়েছে, পালানোর সময় তার বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে । ধারণা করা হচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত আসাদ ওই বিমানে ছিলেন। দুর্ঘটনায় আসাদ নিহত হতে পারেন বলে দুটি সিরিয়ান সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল। সিরিয়ার সরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে, বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করা হয়েছে বলে, ঘোষণা করছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম। এই বাহিনীর সদস্যদের আসাদের প্রাসাদে ঢুকে তাঁর পারিবারিক ছবি ভাঙতেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু, কোথায় গেলেন আসাদ? প্রথমে শোনা গিয়েছিল, এক বিমানে করে কোনও অজানা গন্তব্যে পালিয়ে গিয়েছেন। এর পরপরই জল্পনা তৈরি হয়েছে, পালানোর সময় তাঁর বিমানটিকে গুলি করে ধ্বংস করে দিয়েছে বিদ্রোহীরা। তবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, বাশার-আল আসাদ সম্ভবত সিরিয়ার বাইরে রয়েছেন। যদিও সিরিয়ার দুটি নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিমান দুর্ঘটনার মারা যাওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ দামেস্ক থেকে তাকে বহনকারী বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে অনেকটা আকস্মিকভাবে দিক পরিবর্তন করে। বিমানের এই দিক পরিবর্তন নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। ওপেন-সোর্স ফ্লাইট ট্র্যাকার থেকে জানা যাচ্ছে, দামেস্ক ছেড়ে যাওয়া শেষ বিমানটি ছিল একটি ইলিউশিন-৭৬ প্লেন, যার ফ্লাইট নম্বর ছিল সিরিয়ান এয়ার ৯২১৮। ধারণা করা হচ্ছে, এই উড়োজাহাজটি আসাদকে বহন করছিল। এটি বিদ্রোহীরা বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঠিক আগে উড্ডয়ন করে। এটি প্রথমে পূর্বদিকে উড়ে যায় এবং পরে উত্তর দিকে মোড় নেয়, কিন্তু হোমসের ওপর দিয়ে চক্কর কাটার সময় এর সিগন্যাল হঠাৎ হারিয়ে যায়। এই জল্পনা তৈরি হয়েছে খালেদ মাহমুদ নামে এক মিশরীয় সাংবাদিকের একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে। পোস্টে তিনি অনলাইন ট্র্যাকার ‘ফ্লাইটরাডার২৪ ডট কম’ থেকে একটি বিশেষ বিমানের ফ্লাইট ডেটা পোস্ট করেছেন। দেখা যাচ্ছে, বিদ্রোহীরা ঠিক যে সময় সিরিয় রাজধানী দখল করার দাবি করেছে, সেই সময়ই সিরিয়ান এয়ারের একটি বিমান দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড়েছিল। ‘ইলিউশিন আইএল-৭৬টি’ নম্বরের বিমানটি প্রথমে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে যাচ্ছিল। তবে, হমস শহরের কাছে আচমকা বিমানটি ইউটার্ন নেয়। কয়েক মিনিট বিপরীত দিকে ওড়ার পরই বিমানটি রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। ফ্লাইটরাডারের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্রোহীরা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের দখল নেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই একটি বিমান দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছে। বিমানটি প্রাথমিকভাবে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে উড়েছিল। ওই অঞ্চলটিতে আসাদ-সমর্থিত আলাউইত সম্প্রদায়ের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। কিন্তু সেখানকার আকাশে পৌঁছানোর পর আকস্মিক ইউ-টার্ন নেয় বিমানটি। এরপর কয়েক মিনিটের জন্য বিপরীত দিকে উড়ে যায় এবং কিছুক্ষণ পর মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় বিমানটি। ফ্লাইট ডেটা থেকে আরও জানা গিয়েছে, নিখোঁজ হওয়ার আগে সেটি ৩,৬৫০ মিটার উচ্চতা থেকে দ্রুত কয়েক মিনিটের মধ্যে ১,০৭০ মিটার উচ্চতায় নেমে এসেছিল। হমস শহরের দখল রয়েছে বিদ্রোহীদের হাতে। সেখানেই বিমানটির আকস্মিক পথ পরিবর্তন এবং তারপর তার সংকেত হারিয়ে যাওয়া থেকে জল্পনা তৈরি হয়েছে বিমানটিকে গুলি করা হতে পারে। যান্ত্রিক গোলোযোগের কারণেও বিমানটি ভেঙে পড়তে পারে। ফ্লাইটরাডার২৪ জানিয়েছে, সিরিয় বিমানগুলিতে পুরোনো ট্রান্সপন্ডার লাগানো থাকে। তাছাড়া, গৃহযুদ্ধের কারণে এখানকার বহু জায়গায় জিপিএস জ্যাম করা থাকে। তাই তাদের দেওয়া তথ্যে অসঙ্গতি থাকতেই পারে। তবে ওই সময়ের আগে পর্যন্ত বিমানটি থেকে ভালোই সংকেত পাওয়া যাচ্ছিল। জালালি বলেছেন, দেশের এই ক্রান্তিকাল অতিক্রমের জন্য তিনি বিদ্রোহী কমান্ডার ইসলামপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির সাথে আলোচনার জন্য যোগাযোগ করেছেন। যা দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গঠনের প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রেসিডেন্ট বাশার-আল আসাদের পাশাপাশি তার সন্তান ও ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রী আসমা কোথায় রয়েছেন, তা এখনও জানা যায়নি। তবে সিরিয়ার এই প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও আমিরাতের প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেছেন, আসাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন কি না, তা তিনি জানেন না। বাহরাইনের মানামা সংলাপে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আনোয়ার গারগাশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসাদ আশ্রয় নিতে পারেন এমন জল্পনার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ‘‘লোকজন জানতে চাইছেন, বাশার আল-আসাদ কোথায় যাচ্ছেন? সত্যিই দিনের শেষে এটি ইতিহাসের একটি পাদটীকা। আমি এটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। যেমনটা আমি বলেছি, শেষ পর্যন্ত এটি বড় ঘটনার এক পাদটীকা।’’