আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বেকার হবে লাখাে শ্রমিক
প্রতিযোগিতার বিশ্ববাজারে শিল্পপণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এতে একই সঙ্গে সুবিধা এবং অসুবিধা দুই-ই তৈরি হচ্ছে। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভরতার মাধ্যমে যদি ১৫ শতাংশ উৎপাদন বাড়ে, তাহলে প্রায় ৭ লাখ শ্রমিক কাজ হারাবে। আর যদি উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ অর্থাৎ ৩০ শতাংশ বাড়ানোর কথা চিন্তা করা হয়, তাহলে ১০ লাখ ২২ হাজার শ্রমিক কাজ হারাবে। উৎপাদনশীলতা ৫০ শতাংশ বাড়ানো হলে বেকার বাড়বে ১৮ লাখ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থার বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে এ সম্পর্কিত গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। গত শনিবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে চার দিনের এ সম্মেলন শুরু হয়। ‘বাংলাদেশে শিল্প খাতে প্রযুক্তির উন্নয়নে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে: একটি ধারণামূলক প্রক্ষেপণ’ নামের এ গবেষণার ফল তুলে ধরেন বিআইডিএসের গবেষণা সহকারী ফারহিন ইসলাম। ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহির এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রযুক্তির ব্যবহার উৎপাদনশীলতা বাড়ালে কাজ হারানোর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটবে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাত। উৎপাদনশীলতা ৩০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হলে এ খাতেই ৬ লাখ ৫০ হাজার বেকার হবে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে নন-মেটাল বা অধাতব শিল্পপণ্য খাত। এ ধরনের শিল্পে কাজ হারাবে ৩ লাখের বেশি শ্রমিক। বিভিন্ন হারে কাজ হারানোর শঙ্কার মধ্যে থাকা অন্য বড় শিল্প খাতের মধ্যে রয়েছে– খাদ্যপণ্য, চামড়া ও চামড়া পণ্য, ফার্নিচার ও ওষুধ। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্প খাতে কাজ হারানোর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে ঢাকায়। তারপর চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনায়। অবশ্য প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রযুক্তির বিষয়ে শ্রমিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হলে কাজ হারানোর মতো দুঃখজনক পরিস্থিতি অনেকটা এড়ানো সম্ভব। এ উদ্দেশ্যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় প্রতিবেদনে। এ অধিবেশনে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ক অন্য একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. কাজী ইকবাল। এতে তিনি বলেন, পোশাকশিল্প শ্রম নির্ভরতা থেকে মেশিন নির্ভরতায় যাচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কাজ হারানোর ঘটনা যেমন ঘটবে, আবার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে। পণ্যের মূল্যও বেশি পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, কাজ পেতে বায়িং হাউসগুলোর ওপর পোশাক কারখানার নির্ভরতা কমেছে। আগের ৫১ শতাংশ থেকে এ হার এখন কমে হয়েছে ৩৮ শতাংশ। প্রায় একই হারে বেড়েছে সরাসরি ক্রেতার সঙ্গে কারখানা পর্যায় থেকে যোগাযোগ। বিএসসি এবং ডিপ্লোমা পর্যায়ে প্রকৌশলীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে নারীদের মধ্যে এ প্রবণতা বলতে গেলে নেই। যদিও এ শিল্পের নারীর আনুপাতিক হার পুরুষের চেয়ে এখনও বেশি। অবশ্য এ শিল্পে নারীর সংখ্যা পুরুষের আনুপাতিক হারে কমছে। আলোচনায় দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরা বলেন, যত যাই-ই বলা হোক না কেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে মানসম্পন্ন পণ্য ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে পালানোর কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের মতো শিল্প খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর আর কোনো বিকল্প নেই। দেশে যথেষ্ট শ্রমশক্তি আছে, যারা প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত নয়। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করেই কর্মসংস্থান এবং প্রতিযোগিতামূলক শিল্পের মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। গতকালের বিভিন্ন অধিবেশনে কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তা, করপোরেট কৃষি, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, গবেষকরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। আগামীকাল এ সম্মেলন শেষ হবে।