বাংলাদেশ-ভারত মহারণ আজ
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের লড়াইটি গত এক যুগ ধরেই ভিন্ন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুই দেশের ভালো সম্পর্ক থাকলেও মাঠে একটা বৈরিতা ছিলই। বিশেষ করে সীমিত ওভারের ফরম্যাটে দু’দলের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায়। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক পাল্টে গিয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে উত্তপ্ত অবস্থায় রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রায় প্রতিদিনই ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে। ভারতীয়রা অবশ্য আরও বেশি আক্রমণাত্মক। কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের হাইকমিশনে আক্রমণ হয়েছে; দিল্লি, মুম্বাই এমনকি চেন্নাইয়েও ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশবিরোধী আগ্রাসী মিছিল। ভারতীয় গণমাধ্যম তো মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। তারাই সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলেই অভিযোগ। এই যুদ্ধংদেহী অবস্থার মধ্যে আজ দুবাইয়ে যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। দুই দেশের চলমান উত্তপ্ত সম্পর্কের কারণে যুবাদের ম্যাচটিও চলে এসেছে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেট বৈরিতা ২০১৫ বিশ্বকাপে ভিন্ন রূপ নিয়েছিল। তখন ভারতের বিপক্ষে হেরে যাওয়া বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফুঁসে উঠেছিল জনতা। ২০১৬ সালে টি২০ বিশ্বকাপে সে শোধ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ অবিশ্বাস্যভাবে নষ্ট করেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। এর পর নিদাহাস ট্রফির শেষ ওভারের হার সে ক্ষত আরও গভীর করে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ভারতকে হারিয়ে যুব বিশ্বকাপ জয় যেন তাতে কিছুটা প্রলেপ দিয়েছিল। এবার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দুই দেশের জনসাধারণই ক্রিকেটের মাধ্যমে প্রতিশোধ চাইছেন। আজিজুল হাকিম তামিমের দল কি পারবে দেশবাসীকে সেই তৃপ্তি দিতে? আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের শিরোপা ধরে রাখার মিশনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং। বিশেষ করে বৈভব সূর্যবংশী নামক ১৩ বছরের ওপেনার সবচেয়ে বড় হুমকি। এই টুর্নামেন্টে তিনি যেভাবে ব্যাট চালাচ্ছেন, তাঁকে নিয়ে আলোচনাটা মোটেই বাড়াবাড়ি নয়। যুব এশিয়া কাপে ৪ ম্যাচে ১৬৭ করে তিনি রান সংগ্রহ করে সাত নম্বরে থাকলেও তাঁকে নিয়ে ভয়টা অন্য জায়গায়। শুরু থেকেই বিস্ফোরক ব্যাটিং করে একা হাতে ম্যাচের চেহারা পাল্টে দিতে পারেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেমিতে ৩৬ বলে ৬৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ভারতের অপর ওপেনার আয়ুশ মাত্রেও মারকুটে ব্যাটার। অবশ্য তাদের মোক্ষম জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছেন বাংলাদেশের পেস বিভাগ। দারুণ ফর্মে আছেন বাংলাদেশের দুই পেসার আল ফাহাদ ও ইকবাল হাসান ইমন। সমান ১০টি করে উইকেট নিয়ে দু’জনই আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির দৌড়ে যৌথভাবে শীর্ষে আছেন। এর মধ্যে সেমিতে শক্তিশালী পাকিস্তানকে ধসিয়ে দিতে মূল ভূমিকা ছিল ইমনের। উইকেট শিকারে তাদের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও ভালো বোলিং করছেন মারুফ মৃধাও। দলের এক নম্বর পেসার কিন্তু মারুফই। ব্যাটিংয়ে মূল ভূমিকাটা নিতে হবে বাংলাদেশ অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিমকে। দারুণ ছন্দেও আছেন তিনি। একটি সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিতে ২২৪ রান করে সেরা রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তিনে আছেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ওপেনার কালাম সিদ্দিকীর। ৪ ম্যাচে ১৬১ রান তাঁর। তবে দু’জনেরই স্ট্রাইক রেট তেমন ভালো নয়। আসর শুরুর আগে ভারতের এই দলটির বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে জয় বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে বলেও জানিয়েছেন অধিনায়ক আজিজুল। শিরোপা ধরে রাখার ব্যাপারে গতকাল দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। বিসিবি থেকে পাঠানো বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জটা জিততে আমরা সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করব।’ দলের সবাই শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট আছেন বলেও জানিয়েছেন আজিজুল।