২০২৪-২৫ অর্থবছরের উন্নয়ন প্রকল্পে বড় ধরনের সংকোচন
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আগের সরকারের অনুমোদন করা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বরাদ্দে বড় ধরনের সংকোচন দেখা দিতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু প্রকল্পকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' হিসেবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে এসব প্রকল্পের অনেকগুলো বন্ধ হতে পারে। সামাজিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের পর চলতি বছরের ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের অর্থের অপচয় রোধে এসব 'অপ্রয়োজনীয়' প্রকল্প বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। একনেকের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে নেওয়া বেশ কিছু প্রকল্প ব্যয়ের তুলনায় সন্তোষজনক ফলাফল দেয়নি। বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সম্প্রতি একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের জানান, “বিগত বছরগুলোর তুলনায় উন্নয়ন বরাদ্দ কমানো হবে।” তিনি আরও বলেন, অনেক প্রকল্পের ব্যয়ের তুলনায় ইতিবাচক ফলাফল আসার সম্ভাবনা কম, তাই সেগুলো কাটছাঁট করা হয়েছে। তবে, সরকার জানিয়েছে, এসব প্রকল্পের অধিকাংশই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল এবং সেগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ ছিল। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সেগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীর গতি চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) উন্নয়ন বরাদ্দ বাস্তবায়নের হার ৮ শতাংশ কমেছে, যা বিগত বছরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে এ হার ১২ থেকে ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, একনেক সভায় নতুন প্রকল্পের গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যেখানে উদ্ভাবনী এবং নতুন ধরনের প্রকল্পে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। পুরোনো ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্পগুলো বাদ দিয়ে সৃজনশীল প্রকল্পের দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে। সরকারের নতুন পদক্ষেপ আন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রকল্প পরিচালকদের সতর্কতার সঙ্গে নতুন প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রকল্পগুলো ব্যয়ের তুলনায় বেশ কিছু ইতিবাচক ফল দিতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি, সরকারের পক্ষ থেকে আগের সরকারের প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, বিশেষ করে যখন অনেক প্রকল্প পরিচালক পালিয়ে গেছেন। নতুন এডিপি এবং প্রকল্প সংখ্যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছিল। এতে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, মোট বরাদ্দের ২৬.৬৭ শতাংশ। নতুন এডিপিতে মোট ১ হাজার ৩২১টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ১৩৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ২১টি সমীক্ষা প্রকল্প, ৮৭টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প, এবং ৮০টি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের প্রকল্প রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দে বড় ধরনের সংকোচন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেশের অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। তবে, অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত এবং নতুন প্রকল্পগুলো সরকারের অর্থনৈতিক কৌশলে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, যা জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।