এক বছরে সৌদিতে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩০০
২০২৪ সালে সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩০০, যা এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। চলতি বছরের মাত্র কয়েক মাসে ৩০৩ জনের প্রাণ ঝরেছে, এবং মঙ্গলবার একদিনেই ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকে মাদক পাচারে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, এবং চতুর্থজনকে খুনের দায়ে শাস্তি দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডের এই সংখ্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সৌদি সরকারের বিচার প্রক্রিয়ার উপর ব্যাপক সমালোচনা উঠেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানায়, ২০২৩ সালে সৌদি আরব ছিল মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে, চিন ও ইরানকে পিছনে ফেলে। শুধু ২০২৩ সালে, সৌদি সরকার ১৭০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৯৬, যা সেই সময়ের জন্য একটি রেকর্ড ছিল। তবে ২০২৪ সালের শেষ হওয়ার আগেই, পুরনো রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে সৌদি সরকার, এবং এতে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতি এবং তার বৈষম্য সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতি ভারতে থেকে অনেকটাই ভিন্ন। ভারতে ফাঁসি দেওয়া হয়, তবে সৌদি আরবে সাজাপ্রাপ্তদের শাস্তি হিসেবে তাঁদের মাথা কেটে নেওয়া হয়। এই ধরনের শাস্তি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলির চোখে অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও অমানবিক। সৌদি সরকার যদিও এই বিষয়ে কোনও স্পষ্ট বিবৃতি দেয়নি, তবে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বারবার বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা অনেক বেশি। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই এই দেশে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কমানোর জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে, কিন্তু সৌদি সরকার কখনই তাদের দাবির প্রতি গুরুত্ব দেয়নি। বরং, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে, যা তার মানবাধিকার নীতির প্রতি প্রশ্ন তুলছে। আন্তর্জাতিক চাপ এবং সৌদির প্রতিক্রিয়া সৌদি আরবের মৃত্যুদণ্ডের এই প্রবণতা আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষভাবে নিন্দিত হচ্ছে। বিশেষ করে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে যে, মৃত্যুদণ্ডের এই সংখ্যা আসলে বিচার ব্যবস্থার অতি কঠোরতার প্রমাণ। অনেকেই এই ধরনের শাস্তিকে 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা' এবং 'অত্যাচার' হিসেবে বিবেচনা করে। তবে সৌদি সরকার কখনই তার নীতি পরিবর্তন করার কোনও লক্ষণ দেখায়নি। তাদের মতে, এই মৃত্যুদণ্ডগুলি ইসলামিক শরিয়া আইন অনুযায়ী দেওয়া হয়, এবং তারা তাদের সিস্টেমে আইন ও শাস্তির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। এই ধরনের মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা বিশ্বব্যাপী সমালোচনার সৃষ্টি করেছে, এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলির দাবি, সৌদি আরবকে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা মেনে চলতে হবে। মৃত্যুদণ্ডের এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের উপর তার প্রভাব পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলি, সৌদি সরকারের কাছ থেকে মানবিক আইন অনুযায়ী শাস্তির নিয়মে পরিবর্তন আশা করছে।