২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা কী ঘটেছিল সেই দিন
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2024/12/untitled-11-1733081102-300x169.webp)
২১ আগস্ট, ২০০৪। ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চারপাশে উপচে পড়া ভিড়। দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ডাকে সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি মিছিল হওয়ার কথা ছিল সেই দিন। বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। ট্রাকের ওপর তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে শেখ হাসিনা বক্তব্য দেওয়ার সময় তাঁকে ঘিরে ছিলেন দলীয় নেতারা। তাঁর বক্তব্যের শেষ মুহূর্তে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণে হতাহত হন অনেকে। রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে মানবদেহের ছিন্নভিন্ন টুকরো। হতবিহ্বল হয়ে পড়েন সবাই। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় প্রাণ হারান ২৪ জন। একটি গ্রেনেড ট্রাকের বাঁ পাশে পড়ে বিস্ফোরিত হওয়ার পরপরই শেখ হাসিনা বসে পড়েন। এ সময় তাঁর পাশে থাকা নেতারা তৈরি করেন মানববর্ম। চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয় তাঁকে। প্রথম গ্রেনেড হামলার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ট্রাক লক্ষ্য করে একই দিক থেকে পরপর আরও দুটি গ্রেনেড ছোড়া হয়। এ সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকা দেহরক্ষী পুলিশরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। শেখ হাসিনাকে ট্রাক থেকে দ্রুত নামিয়ে তাঁর গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। গ্রেনেড হামলার পরই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বিভীষিকার দৃশ্য স্পষ্ট হতে থাকে। রক্তাক্ত নেতাকর্মীর ছুটোছুটিতে গোটা এলাকার চেহারা বদলে যায়। কেউ কেউ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। অনেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থেকে সাহায্যের জন্য আকুতি জানান। গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আহতদের হাসপাতালে পাঠাতে বেকায়দায় পড়তে হয়। গ্রেনেড হামলার খবর পেয়ে ঢাকার নানা প্রান্ত থেকে শত শত মানুষ হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজনের খবর নিতে। ঢাকা মেডিকেল ছাড়াও বাংলাদেশ মেডিকেল, হলি ফ্যামিলিসহ রাজধানীর প্রায় সব বড় হাসপাতালের ছিল একই চিত্র। সেদিন যারা প্রাণ হারান, তাদের মধ্যে রয়েছেন– শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), ঢাকা মহানগরের ৫৮ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুফিয়া বেগম, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা মমতাজ রীনা, মহিলা আওয়ামী লীগ কর্মী রেজিয়া বেগম, জাতীয় শ্রমিক লীগ কর্মী নাসির উদ্দিন সর্দার, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড রিকশা শ্রমিক লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফ, ৬৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেন, যুবলীগ বালুঘাট ইউনিটের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি লিটন মুন্সী লিটু, ৮৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা আতিক সরকার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ কর্মী রতন সিকদার, ছাত্রলীগ কর্মী মামুন মৃধা, জামালপুর আওয়ামী লীগ কর্মী আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, টাঙ্গাইল আওয়ামী লীগের কৰ্মী ইছহাক মিয়া, মো. শামসুদ্দিন, মমিন আলী, আবুল কাসেম ও জাহেদ আলী। এদিকে, গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা আওয়ামী লীগের মহিলা সম্পাদিকা আইভি রহমান মারা যান ২৪ আগস্ট।