স্ট্রোক যেভাবে বুঝবেন

১ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১০:১২ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা এবং দ্রুত এর চিকিৎসা শুরু করা না গেলে রোগীর পঙ্গুত্ববরণের পাশাপাশি তাঁর মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। সারাবিশ্বে প্রতি ছয়জনে একজন এ রোগের ঝুঁকিতে আছেন। সুতরাং সমাজের সব স্তরে রোগ সচেতনতা না বাড়ালে মস্তিষ্কের এ ভয়াবহ ব্যাধিটি সামাজিকভাবে আমাদের বড় ধরনের স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে।ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন স্ট্রোক যেভাবে বুঝবেন স্ট্রোকের সঙ্গে অনেকে হার্ট অ্যাটাককে গুলিয়ে ফেলেন। দুটি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। স্ট্রোক মূলত মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত হানে। মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে মস্তিষ্কের কোষগুলো মরে গেলে স্ট্রোক হয়। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। কারণ, এ রক্তের মাধ্যমেই শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছায়। কোনো কারণে মস্তিষ্কের কোষে যদি রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায় বা ছিঁড়ে যায় তখনই স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। স্ট্রোকের ঝুঁকিতে যারা রয়েছেন সাধারণত ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকলেও, তরুণ এমনকি শিশুরাও স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। কভিডের সময় ভাইরাস সংক্রমণের জটিলতা স্বরূপ অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদেরও স্ট্রোকের শিকার হতে হয়েছে। যেসব শিশু জন্মগত নীলাভ হৃদরোগে আক্রান্ত হয় তারাও অধিক হারে স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর তুলনায় পুরুষ অধিকহারে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। স্ট্রোকের প্রকারভেদ স্ট্রোক তিন ধরনের হয়ে থাকে– মাইল্ড স্ট্রোক, ইসকেমিক স্ট্রোক ও হেমোরেজিক স্ট্রোক। মাইল্ড স্ট্রোকে রোগীর মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ সাময়িক বন্ধ হয়ে আবারও চালু হয়। এটি মূলত বড় ধরনের স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ। ইসকেমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের ও শরীরের অন্যান্য স্থানের রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধে। বয়সজনিত কারণে অথবা ডায়াবেটিস হাইপারলিপিডিমিয়া মেটাবলিক সিন্ড্রোমের রোগী এ ধরনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে থাকেন। হেমোরেজিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তনালি ছিঁড়ে রক্তপাত হয়। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত এ ধরনের স্ট্রোকের জটিলতায় আক্রান্ত হোন। যেভাবে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব স্ট্রোকের কারণ খুঁজে বের করার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রক্ত জমাটের কোনো উপাদানের ঘাটতি বা সমস্যা, ডায়াবেটিস, রক্তে কোলেস্টেরল, রক্তে করোনাভাইরাস আছে কিনা এসব রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয় থাকেন। পরবর্তী সময়ে রোগ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে প্রয়োজন হলে কেরোটিড ডুপ্লেক্স পরীক্ষা, ইসিজি ইকো ব্রেইনের সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করে থাকেন। স্ট্রোক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে ব্রেইনের কোনো পরিবর্তন আসে না। এ জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসা করা সমীচীন নয়। স্ট্রোকের চিকিৎসা স্ট্রোক চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘সময়’। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হলে মৃত্যুমুখ থেকে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। রোগী যত দ্রুত চিকিৎসা পাবেন, ক্ষতির আশঙ্কা ততই কমে আসবে। মাইল্ড স্ট্রোকের রোগীদের অনেক ক্ষেত্রে বড় ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন পড়ে না। রোগের কারণ নির্ণয় করে ওষুধ ও রক্তজমাট দূরীকরণের চিকিৎসার মাধ্যমে এবং প্যারালাইসিস দেখা দিলে ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়। বড় ধরনের স্ট্রোক হলে ওষুধ ব্যবস্থাপনা ছাড়াও সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করে মস্তিষ্কে আঘাত বা সমস্যা নিরূপণ করা সাপেক্ষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চিকিৎসা শুরু করেন। মস্তিষ্কের বা মহাধমনির নালিতে বড় ধরনের ব্লক থাকলে নিউরোলজিস্টরা স্টেন্ট বা রিং পরানোর সিদ্ধান্ত নেন। বড় ধরনের রক্তক্ষরণ হলে তাৎক্ষণিক বা জরুরি ভিত্তিতে সার্জারির মাধ্যমে জমাট রক্ত পরিষ্কার করে মুমূর্ষু রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়।v [অধ্যাপক, নিউরোলজি বিভাগ, নিনস আগারগাঁও ঢাকা]