বিজয়ের মাস
বছর ঘুরে আবার এসেছে বাঙালির অহঙ্কার বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালি তার আত্মপরিচয়, স্বাধীনতা ও স্বাধীন পতাকা পেয়েছিল যে মাসে, তার নাম ডিসেম্বর। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের বয়স এখন ৫৩ বছর। এই বিজয়ের মাসে পুরো কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতিই উৎসবে-আনন্দে মাতোয়ারা হবেন, হৃদয়ের অঞ্জলি ও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মহার্ঘ স্বাধীনতা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের এ বিজয় শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এর পেছনে রয়েছে লাখ লাখ মানুষের রক্ত ও মহান আত্মত্যাগ। মুক্তিপাগল বাঙালি জাতি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই ডিসেম্বরেই ছিনিয়ে আনে হাজারো বছরের লালিত স্বপ্ন প্রিয় স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বিজয়। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায় লাল-সবুজের রক্তস্নাত স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তাই ডিসেম্বর হচ্ছে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন জাতি ও ভূখণ্ডের স্বীকৃতি আদায়ের মাস। ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসন-শোষণকে পদানত করে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাংলার দামাল সন্তানরা ছিনিয়ে আনা বীরত্বগাথা বিজয় অর্জনের মাস। আবারও ফিরে এলো বিজয়ের মাস। আজ ১ ডিসেম্বর। ৫৩ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই ডিসেম্বরেই বাঙালির নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এই ডিসেম্বরের ১৬ তারিখেই আমরা পেয়েছিলাম দেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পেয়েছিলাম একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, একটি লাল সবুজের পতাকা। তাই ডিসেম্বর মাস বাঙালি জাতিসত্তা আর নিজস্ব ভূমির গৌরবদীপ্ত বিজয় ও অহঙ্কারের মাস। প্রতি বছরের মতো এবারও বিজয়ের মাসে দেশবাসী বিজয়ের আনন্দে উচ্ছ্বসিত হবে। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও শোকে মুহ্যমান হয়ে মাথা নোয়াবে অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। নানা আয়োজনে সবার চেতনায় ধ্বনিত হবে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাথার স্মৃতিচারণ আর বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীয় পুনর্জাগরণ, মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয়-সামাজিক-আর্থিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মানবোধ জাগানোর লক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও দিবসটি পালিত হবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী আজ রবিবার ঢাকায় পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার এক বিবৃতিতে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সিপিবি নেতারা বলেন, ১৯৭১ সালে যাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয় অর্জন হয়েছে, বিজয়ের মাসে সে সব লাখো শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাঁরা আরও বলেন, যে আকাক্সক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। ফ্যাসিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শোষণ-বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। যদি সব জাতি-ধর্মের মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা না যায় তা হলে মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিফলে যাবে। বিজয়ের মাসে দেশব্যাপী কর্মসূচি অংশ হিসেবে আগামী রবিবার সারা দেশে জাতীয় পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে আগামী রবিবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পতাকা মিছিল শুরু হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে গিয়ে শেষ হবে।