ইমরান খানের ‘চূড়ান্ত আন্দোলনের’ ডাক কতটা সফল হবে?

২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

আগামী ২৪ নভেম্বর পুরো পাকিস্তানজুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি এদিন জনগণের ম্যান্ডেট রক্ষার জন্য দলীয় নেতাকর্মীসহ সবাইকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। ইমরান এই আন্দোলনকে ‘শেষ ডাক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। কারাবন্দি ইমরান খান তার আইনজীবীদের মাধ্যমে আগামী ২৪ নভেম্বর পুরো পাকিস্তানে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জনগণের ম্যান্ডেট চুরি করেছে, নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করেছে। এ ছাড়া সংবিধানের ২৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে ‘স্বৈরাচারী সরকারের ভিত্তি’ শক্ত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন ইমরান। আর এগুলোর বিরুদ্ধেই আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তিনি। ইমরান খান বলেছেন, ২৪ নভেম্বর বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হবে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান এবং বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হবে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন শেষ হবে না। এদিকে ইমরান খানের ডাকা বিক্ষোভ দমাতে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে অতীতের বিক্ষোভের চেয়ে এবার পিটিআইয়ের লংমার্চের ঘোষণাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি শুধু এবার কারাগারের বাইরেই নন, তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতেও অংশ নিচ্ছেন। পিটিআইয়ের লংমার্চ অতীতের বিক্ষোভ থেকে কতটা আলাদা হবে? সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও লংমার্চে দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানসহ অন্য নেতাদের বড় ধরনের কোনো স্বস্তি দিতে পারেনি পিটিআই। এমন পরিস্থিতিতে এখানে প্রশ্ন জাগে, পিটিআইয়ের ২৪ নভেম্বরের লংমার্চ অতীতের বিক্ষোভ থেকে কতটা আলাদা হবে?আর এই লংমার্চ মোকাবিলায় শাহবাজ সরকারের কৌশল কী? পিটিআইয়ের অন্তর্গত জাতীয় পরিষদের সদস্য শের আলি আরবাব বলেছেন, পূর্ববর্তী বিক্ষোভের উদ্দেশ্য ছিল কর্মীদের সংগঠিত করা।তাদের উজ্জ্বীবিত রাখতে এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করতে এসব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। ২৪ নভেম্বরের লংমার্চ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রতিবাদ (লংমার্চ) দীর্ঘমেয়াদি হবে।এটি আগের সব কর্মসুচির চেয়ে আরও সংগঠিত হবে এবং জনগণও এতে বিপুল সংখ্যায় অংশ নেবে। সরকার ও পিটিআইয়ের মধ্যে পর্দার আড়ালে সংলাপের গুঞ্জন পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে এমন খবরও রয়েছে যে, পিটিআই ও সরকারের মধ্যে কিছু নেপথ্য আলোচনা চলছে। সরকারের মন্ত্রীরা এই বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি, অন্যদিকে পিটিআইয়ের এমএনএ শের আলী আরবাব বিবিসি উর্দুকে বলেছেন যে, তিনি সরকার বা সামরিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো আলোচনার বিষয়ে অবগত নন। তবে ইমরান খানের বোন আলিমা খান নিশ্চিত করেছেন যে ব্যারিস্টার গোহর এবং মুখ্যমন্ত্রী কেপিকে আলী আমিন গান্দাপুর পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার অনুমতি চেয়েছেন। মঙ্গলবার আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আলিমা খান সাংবাদিকদের বলেন, ব্যারিস্টার গহর এবং আলী আমিন গান্দাপুর তার (ইমরান খান) কাছে এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার অনুমতি চেয়েছেন।ইমরান খান বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় তাদের দরজা খোলা রাখে। দলটির তথ্য সম্পাদক শেখ ওয়াকাস আকরাম বলেন, সরকার ও পিটিআইয়ের মধ্যে কোনো পর্যায়েই কোনো যোগাযোগ নেই, এটা করার সুযোগও নাই, প্রতিবাদও বন্ধ করা যাবে না। সিনেটে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা সিনেটর ইরফান সিদ্দিকীও বলেছেন, সরকার বা পিটিআইয়ের মধ্যে আলোচনার বিষয়ে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। সিনেটর ইরফান সিদ্দিকী বলেন, ইমরান খান বোনদের মাধ্যমে লংমার্চের ডাক দিয়েছেন এবং তার স্ত্রী এর আয়োজন করছেন। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী যা করার তাই করুন, নইলে কর্মীদের বাঁচানোর কোনো উপায় আছে বলে আমি মনে করি না। পিটিআইয়ের লংমার্চে ইমরান খানের স্ত্রীর ভূমিকা কী? ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি এবার দলের লংমার্চে সক্রিয়। তার একটি অডিও সোশ্যাল মিডিয়া এবং মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে যেখানে তিনি ২৪ নভেম্বরের লংমার্চের বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির নির্বাচিত সদস্য দাওয়ার খান কান্দি বিবিসি উর্দুকে বলেন, বুশরা বিবি আমাদের ফার্স্ট লেডি এবং তার আদেশ আমাদের দল অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে পালন করে।আর আমরাও মনে করি, খান সাহেব যখন কারাগারে আছেন, বুশরা বিবিও যেহেতু কারাগারে সময় কাটিয়েছেন, তিনিও কষ্ট করছেন, তখন আমরা খুশি যে তার পৃষ্ঠপোষকতা দলের ওপর আসবে এবং দলের মধ্যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে আলী শের আলী আরবাব বলছেন, মিসেস খান ইমরান খানের বার্তা কর্মী ও নেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু এর বাইরে তিনি দলের পদমর্যাদার কেউ নন। তিনি বলেন, ইমরান খানের বোন ও স্ত্রীর বার্তার মাধ্যমে লংমার্চের আহ্বান জোরদার হয়েছে এবং এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পিটিআইয়ের রাজনীতিতে বুশরা বিবির সম্পৃক্ততা নিয়ে পিটিআইয়ের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। খাইবার পাখতুনখোয়ার রাজনীতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা বিশ্লেষক আকিল ইউসুফজাই বলেছেন, দলের কিছু লোক রাজনীতিতে বুশরা বিবির ‘হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে খুশি নয়। বিবিসি উর্দু থেকে অনুবাদ