কোন পথে বাংলাদেশ?

১৭ নভেম্বর, ২০২৪ | ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের ১০০ দিন পেরোলো। কিন্তু নিবার্চন কবে হবে তা নিয়ে ধোয়াশাঁ কাটছে না। জনমনে কৌতূহল দানা বেঁধেছে। চারদিকে ফিসফাস। এর মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বতীর্ সরকারের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত। সংস্কারের গতিই ঠিক করবে, নিবার্চন কত দ্রুত হবে। বাস্তবে সংস্কারের গতি তেমন উল্লেখ করার মতো নয়। এর আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান বলেছিলেন, নিবার্চন হবে ১৮ মাসের মধ্যে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, ২০২৫ সাল নাগাদ নিবার্চন অনুষ্ঠিত হবে। পরবতীর্তে তিনি বিষয়টা তার এখতিয়ার অধীন নয় বলে মন্তব্য করেছেন। বিএনপি দ্রুত নিবার্চন চাইছে। ভোটের রোডম্যাপ চাইছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে রোডম্যাপ দেবার কোনও আশ^াস দেখা যাচ্ছে না। অন্তর্বতীর্ সরকারের অনেক ডালপালা দৃশ্যমান হচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রসারণ হবার পর নতুন উপদেষ্টাদের মেনে নিতে পারছে না ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। তারা বলছে, উপদেষ্টা নিয়োগে ছাত্র নেতাদের মতামত নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছে তারা। নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান দল বিএনপি ও ছাত্রদের দূরত্ব স্পষ্ট। জামাত এখানে কৌশলী। তারা দল ও ঘর গোছাতে ব্যস্ত। তারা বারবার সংস্কারের পর নির্বাচন চাইছে। বিএনপি বলছে, প্রকৃত সংস্কার রাজনৈতিক সরকারই ভালোভাবে করতে পারবে। সংস্কাারের নামে অচেনা পথে হাঁটতে পারি না। সরকারের সঙ্গে ছাত্রদের সমন্বয়ের অভাবটা স্পষ্ট হচ্ছে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জুলাই—আগস্টের গণঅভ্যূত্থানে আহতদের দেখতে যাবার পর আহতরা অনেকে রাস্তায় নেমে আসেন। তারা সুচিকিৎসার দাবিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিএনপিও নানা প্রস্তাবনা সামনে নিয়ে আসছে। বিএনপি যখন বারবার দ্রুত নিবার্চন চাইছে; তখন নিবার্চন নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়টা আঁচ করা যায়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। তার বিরুদ্ধে মামলা আছে যেগুলো নিবার্হী আদেশে প্রত্যাহারে কারও কোনও আগ্রহ নেই। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও অস্পষ্টতা আছে। নিবার্চন হলে বিএনপি বিপুল বিজয় লাভ করবে সন্দেহ নেই। তারেক রহমানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আইনি প্রক্রিয়ার বাধা অপসারণের বিষয়েও বিবেচ্য। তারেক রহমান দেশে ফিরতে না পারার কারণে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার বিষয়টি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। জানা গেছে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এক সঙ্গে দেশের বাইরে থাকার ব্যাপারে বেগম জিয়ার পরিবারের আপত্তি আছে। ‘মাইনাস টু’ ফমুর্লা কার্যকর করার একটা চক্রান্ত ভেতরে ভেতরে কাজ করে বলেই কেউ কেউ অনুমান করেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি এক বক্তব্যে ‘মাইনাস টু’ করার কথা চিন্তাও করবেন না বলে সতর্ক করেছেন। মাইনাস টু বলতে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বাদ দেবার কথা বোঝায়। ওয়ান ইলেভেন খ্যাত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই ফমুর্লার প্রবর্তকরা এবারের অন্তর্বর্তি সরকারের ওপরও ভর করে আছে। এবারের প্রক্রিয়াকেও আলাদা করতে পারছেন না কেউ। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে নিবার্চনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পথে উত্তরণে সাংবিধানিক নানা জটিলতাও দিন দিন প্রকট হচ্ছে। একটা পক্ষ বর্তমান সংবিধানকে অস্বীকার করে নতুন সংবিধান রচনায় জোর দিচ্ছে। এই ধরনের বিষয়টি কীভাবে অনুমোদন পাওয়া সম্ভব সে সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারছে না। বঙ্গভবন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অপসারণ নিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতির অবতারণা হয়েছিলো। সদ্য শপথ নেওয়া উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামানোর নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে বিতর্কের অবতারণা হয়। প্রথম বিতর্ক তুলেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। তিনি প্রথমে এই কাজকে উদারতা নয় বলে মন্তব্য করেন। তারপর তিনি বিবৃতি দিয়ে তার মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেন। ছবি নামানোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগও বিবৃতি দিয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে বিএনপি রিট করেছে। এই রিটের পক্ষে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘অবিসংবাদিত’ নেতা হিসাবে অভিহিত করেছেন। তবে শেখ মুজিব জাতির পিতা নন বলেও মন্তব্য করেন। তিনি যুক্তি দেখান, বাহাত্তরের সংবিধানে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা বলা হয়নি। বাংলাদেশের সংবিধানের ঘোষণাপত্রে ‘আমরা’ বলা হয়েছিলো। এখন সেখানে ‘আমি’ বিষয়ে অধিক গুরুত্ব আরোপ করে পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশ বিশেষ বাতিল চাওয়া হচ্ছে। কারণ সংবিধানে বর্তমানে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা রেখে তার ছবি নামানো সংবিধানের লংঘণ। অপরদিকে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশ বিশেষ বাতিল হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিস্থাপন হলে অন্তর্বতীর্ সরকার কী তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিনা সেই প্রশ্নের অবতারণা হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে নিবার্চন করার জন্যে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা সেই প্রশ্নের সমাধান নিশ্চয়ই আদালত থেকে আসবে। ইউনূসের অন্তর্বতীর্ সরকার নিবার্চনের রোডম্যাপ না দিলেও ভোটের পথে হাঁটছে। নিবার্চন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্চ কমিটি ১৫ কার্যদিবসে নিবার্চন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করবে। রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে পাঁচ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে নিবার্চন কমিশন নিয়োগ দেবেন। নিবার্চন কমিশন গঠন সম্পন্ন হলে সরকার চাইলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ভোটের আয়োজন করা সম্ভব। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বতীর্ সরকারের ছয়টি কমিশনের সুপারিশ প্রাপ্তি ও তার বাস্তবায়নও বিবেচ্য বিষয় হিসাবে থাকছে। অন্তর্বতীর্ সরকার সংস্কার সম্পন্ন করার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে বিতর্ক চলছেই। বিএনপি বলছে, ন্যূনতম সংস্কার সম্পাদন করে নিবার্চন দিতে হবে। আবার অন্য কোনও কোনও পক্ষ টেকসই সংস্কার এই সরকারের মাধ্যমেই সম্পন্ন করার কথা বলছে। বিএনপি যুক্তি দেখাচ্ছে যে, নিবার্চিত সরকার না হলে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ আসবে না। দ্রব্যমূল্য এখনই আকাশচুম্বি। আইন—শৃঙ্খলার যথেষ্ঠ উন্নতি না হলেও সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে একটা ধ্রু¤্রজাল চারপাশ ঘিরে আছে। বাংলাদেশ অনিশ্চিত অজানা গন্তব্যে অগ্রসর হচ্ছে। আপাতত অন্তবতীর্ সরকারের ১০০ দিনে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। এদিকে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে বিদেশমুখী দল বলে অভিহিত করেছে। তারা বারবার বলেছে, বিএনপির জনগনের ওপর আস্থা নেই। ইউরোপ— আমেরিকার দিকে তাকিয়ে ক্ষতায় যাবার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু ৫ আগষ্টের পতনের পর এই আওয়ামী লীগই বিদেশ বন্দনায় মশগুল। ভারতে আশ্রয় নিয়েছে তাদের অধিকাংশ শীর্ষ নেতৃত্ব। ট্রাম্প বন্দনায় উঠেপড়ে লেগেছে তারা। তাদের ধারনা, ট্রাম্প ও ভারতই ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে।