অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাম্প

১৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর একটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবৈধ অভিবাসী সমস্যা› সমাধান। নির্বাচনী প্রচারণায় বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের দিনই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘অবৈধ অভিবাসী বিদায় অপারেশন’ পরিচালনা করবেন। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সাবেক পুলিশ ও অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোমানকে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব দিচ্ছেন নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি, অভিবাসন বিষয়ক হক স্টিফেন মিলারকে ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও ট্রাম্প সরাসরি আনুষ্ঠানিকভাবে তার মনোনয়ন ঘোষণা করেননি। সোমবার নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এক পোস্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং মিলারকে নিয়োগের জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি প্রেসিডেন্টের আরেকটি চমৎকার পছন্দ। মিলার ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময় পলিসি উপদেষ্টা এবং ভাষণ লেখক হিসেবে কাজ করেছিলেন। তার প্রচারের সময়ও এই ভূমিকা পালন করেছেন, প্রায়ই ট্রাম্পের র‌্যালিতে তার সঙ্গে সফর করেছেন। গত সপ্তাহে ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে তিনি তার প্রধান প্রচারণা পরিচালক সুসান উইলেসকে চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন। রোববার রাতে ট্রাম্প বলেন, তিনি টম হোমানকে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব দিচ্ছেন, যিনি বহিষ্কার এবং সীমান্ত নিরাপত্তা কঠোর করার দায়িত্বে থাকবেন। মিলার এবং হোমান একসঙ্গে কাজ করবেন এমন কিছু আশা করা হচ্ছে, যা ট্রাম্প তার প্রচারণার কেন্দ্রে রেখেছিলেনÑঅবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া। তাদের নিয়োগ ট্রাম্পের অভিবাসন বিষয়ে যে গুরুত্ব দেন, তার একটি ইঙ্গিত হিসেবেও দেখা যাচ্ছে। মিলার মিডিয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের আটক করে শিবিরে রাখা উচিত, যতক্ষণ না তারা দেশে ফেরত চলে যায়। গত বছর নিউইয়র্ক টাইমসে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, আমরা ফেডারেল ক্ষমতার বিশাল সম্পদ ব্যবহার করে অভিবাসন বিষয়ে সবচেয়ে বড় অভিযান শুরু করব। মিলারের একটি বিতর্কিত প্রস্তাব হলো জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার শেষ করা, অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সব শিশু, তাদের পিতামাতার অবস্থান যাই হোক না কেন, নাগরিকত্ব পাওয়ার যে অধিকার রাখেন, তা বাতিল করা। এই প্রস্তাব ট্রাম্পও সমর্থন করেছেন। মিলারের এই নিয়োগের জন্য সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। মিলার তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন কনজারভেটিভ রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান মিচেল বাচম্যানের সহকর্মী হিসেবে এবং পরবর্তীতে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনের সঙ্গে কাজ করেছেন, তারপর তিনি ট্রাম্পের ২০১৬ সালের নির্বাচনি প্রচারণায় যোগ দেন। এদিকে, হোমানকে ‘সীমান্ত সম্রাট’ (বর্ডার জার) নামে অভিহিত করেন ট্রাম্প। এর আগেও ট্রাম্প প্রশাসনে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্সির পরিচালক হিসেবে অভিবাসী নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন হোমান। এর আগে ওবামা প্রশাসনেও তিনি আইসের নির্বাহী সহযোগী পরিচালক ছিলেন। ট্রাম্পের নতুন এই যোদ্ধা ‘ঝেঁটিয়ে’ বিদায় করবেন অবৈধদের, এমনটাই ভাবছেন বিশ্লেষকরা। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্পের কথাবার্তাতেও এ ধরনের মনোভাবের প্রকাশ পেয়েছে। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক বার্তায় ট্রাম্প লিখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি সাবেক আইস পরিচালক ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের কিংবদন্তি টম হোমান ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দেবেন। এই ‘সীমান্ত সম্রাটের’ হাতেই দেশের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব তুলে দিচ্ছি।’ ‘আমি টমকে অনেকদিন ধরে চিনি। সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে রাখায় তারচেয়ে ভালো কেউ নেই,’ যোগ করেন ট্রাম্প। বার্তায় ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর’ দায়িত্বে থাকবেন হোমান। ১৭৯৮ সালের ‘এলিয়েন শত্রু আইন’ অনুযায়ী অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন ট্রাম। এই আইন অনুযায়ী, শত্রু দেশগুলো থেকে আসা লোকজনকে গ্রেপ্তার করে ফেরত পাঠানোর এখতিয়ার রাখে সরকার। এই আইনে পাওয়া ক্ষমতাবলে ‘অপারেশন অরোরা’ নামে একটি অভিযান পরিচালনা করবে ট্রাম্প প্রশাসন। এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেয়া লাখো অভিবাসীকে দেশ থেকে বিদায় করার পরিকল্পনা করছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এক কোটিরও বেশি অবৈধ অভিবাসী বসবাস করছে। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট।