নিহত জোবায়েদের পরিবার জানে না মামলার বাদী কে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৪ আগস্ট ভৈরবের জোবায়েদ (১৬) ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এ ঘটনায় কয়েকজন প্রবাসী ও সাংবাদিকসহ ৯১ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন ভৈরবের যুবলীগ নেতা মনির হোসেন। অথচ নিহত জোবায়েদের পরিবার জানে না মামলার বাদী কে, তার পরিচয় কী। মামলার এজাহারে নিহত জোবায়েদের কোনো পরিচয় ও ঠিকানা লেখা না হলেও পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করায় ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। জোবায়েদ যাত্রাবাড়ীতে ফার্নিচারের দোকানে কাজ করত। ৪ আগস্ট সকালে সে তার শনির আখড়ার বাসা থেকে বের হয়ে দুপুরে বাসায় ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। পুলিশ তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তার পরিবারের লোকজন পরদিন ভৈরবে নিজ গ্রামে তার লাশ দাফন করে। ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের গকুলনগরের নাজির হোসেনের ছেলে জোবায়েদ। ঘটনার ২৭ দিন পর ১ সেপ্টেম্বর ভৈরবের রসুলপুরের যুবলীগের সাবেক নেতা মনির হোসেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় ভৈরবের ৯১ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা ৪ আগস্ট জোবায়েদকে ভৈরব বাসস্ট্যান্ড থেকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে হত্যার পর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় লাশ ফেলে রাখে। আসামিদের মধ্যে চারজন প্রবাসী ও তিনজন সাংবাদিকের নাম আছে। তারা চারজন বিদেশে থেকে কীভাবে অপহরণে জড়িত এবং ভৈরবের তিন সাংবাদিক কেন তাকে অপহরণ করবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিহত জোবায়েদের মা-বাবা বলেন, আমাদের ছেলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে, তাই আমরা মামলা করতে আগ্রহী নই। এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী মনির হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে মোবাইলে এসএমএস পাঠালেও তিনি জবাব দেননি। এলাকাবাসীর অনেকেই বলেছে, মিথ্যা মামলা করার পর তার অপরাধ বুঝতে পেরে ভয়ে এলাকা থেকে পালিয়েছেন বাদী মনির। ভৈরব চেম্বারের সাবেক সভাপতি হুমায়ূন কবির বলেন, আমি ১৯ জুলাই অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছি। শুনেছি আমাকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। ভৈরবের মিনা ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা প্রবাসী। আমাকে মামলায় কী কারণে আসামি করা হলো তা জানি না। সাংবাদিক মাছুম ও অপু বলেন, নিহত জোবায়েদসহ বাদী মনিরকে আমরা চিনি না। ৪ আগস্ট আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলাম। জোবায়েদ নিহতের ঘটনার মামলায় আমাদের তিনজন সাংবাদিককে কেন আসামি করা হলো তা সুষ্ঠু তদন্ত করে বাদীর বিচার করতে হবে। নিহত জোবায়েদের বাবা নাজির হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছেলেমেয়ে, স্ত্রী নিয়ে ঢাকার শনির আখড়ায় বাসায় ভাড়া থাকি। আমার ছেলে ঢাকাতে ফার্নিচারের দোকানে কাজ করত। ঘটনার দিন জোবায়েদ সকালে বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যায়। দুপুরে ফেরার পথে এক চায়ের দোকানের কাছে দাঁড়ালে পুলিশের গুলিতে সে মারা যায়, যা প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাদের জানিয়েছে। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে ভৈরবের কেউ অপহরণ করে হত্যা করেনি। যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান মোবাইল ফোনে বলেন, মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হলে আমি দায়িত্ব পাই। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে সময় লাগবে। মামলার আসামিদের অধিকাংশের বাড়ি ভৈরবে। তাই ঘটনার প্রকৃত রহস্য অধিকতর তদন্ত করে উদঘাটন করতে মামলার এজাহার কপি ভৈরব থানায় পাঠিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব। ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ বলেন, মামলার কাগজপত্র পেয়েছি। মামলার বাদী, নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হবে। আসামিদের বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করার পর আমাদের পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাবে যাত্রাবাড়ী থানায়। পরে যাত্রাবাড়ী পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।