ঘরে বসেই যেভাবে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সবার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার সেবা উন্মুক্ত করেছে। সেই সঙ্গে করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহ দিচ্ছে। এখন থেকে করদাতা অনলাইনে নিবন্ধন নিয়ে ঘরে বসেই আয়-ব্যয়ের তথ্য জানিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪-২৫ করবর্ষের রিটার্ন দাখিলের জন্য অনলাইন ব্যবস্থা চালু করে এনবিআর। এবার এনবিআরের স্লোগান ‘না দাঁড়িয়ে লাইনে, রিটার্ন দিন অনলাইনে’। জানা গেছে, চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই অনলাইনে বা ই-রিটার্ন জমাকারীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এমনি গত সপ্তাহে অনলাইনে রিটার্ন জমা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ায় করদাতাদের আগ্রহ দেখে এনবিআর আশা করছে, চলতি অর্থবছরে অনলাইনে অন্তত ১৫ লাখ রিটার্ন জমা পড়বে। যেভাবে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন: অনলাইন রিটার্ন জমা দেয়ার জন্য এখানে ক্লিক করতে হবে। আর জন্য আগে করদাতাকে প্রথমে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন নিতে করদাতার নিজের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নম্বর লাগবে। এ দুটি দিয়ে নিবন্ধন করে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেয়া যাবে। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন তথা ই–রিটার্ন দিতে করদাতাকে কোনো কাগজপত্র আপলোড করতে বা জমা দিতে হবে না। শুধু ওই সব দলিলাদির তথ্য দিলেই হবে। যেমন, সনাতনী পদ্ধতিতে চাকরিজীবীদের আয়ের বা বেতন–ভাতার প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যাংক হিসাবের এক বছরের লেনদেন বিবরণী (স্টেটমেন্ট) জমা দিলেই চলবে। আগের বছরের ১ জুলাই থেকে পরের বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত (অর্থবছর) সময়ের ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, সুদের তথ্য ও ব্যাংক হিসাবের নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য দিতে হবে। কোনো করদাতা অনলাইনে নিবন্ধন ও রিটার্ন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে যদি কোনো সমস্যায় পড়েন, তাহলে এনবিআরের কল সেন্টারের সহায়তা নিতে পারেন। এ-সংক্রান্ত কল সেন্টার প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চালু আছে। কল সেন্টারের নম্বর ০৯৬৪৩৭১৭১৭১। কল সেন্টারে ফোন করলে একজন কর কর্মকর্তা আপনার সমস্যার সমাধান করে দেবেন। এদিকে মাঝেমধ্যে অনলাইন সিস্টেমে প্রবেশে সমস্যা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে আয়কর কর্মকর্তারা বলেন, একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক করদাতা অনলাইনে ঢোকার কারণে সমস্যা হচ্ছে, তবে তা সাময়িক। অনলাইনে রিটার্ন তৈরি ও জমা দেয়া যাবে; আবার কর পরিশোধও করা যাবে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যেকোনো করদাতা রিটার্ন জমার পাশাপাশি কর পরিশোধ করতে পারবেন। এ ছাড়া একই অনলাইন ব্যবস্থা থেকে দাখিল করা রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতে পারবেন করদাতা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: আয়কর রিটার্ন জমার সময় প্রমাণপত্র হিসেবে কিছু প্রয়োজনীয় নথিপত্র লাগবে। এখনই সেসব বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারেম। যেসব কাগজপত্র লাগবে তার মধ্যে অন্যতম হলো বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌরকরের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ। এমনকি মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেটও লাগবে। বিনিয়োগ করে কর রেয়াত পেতে চাইলেও আরও কিছু কাগজপত্র লাগবে। যেমন জীবনবিমার কিস্তির প্রিমিয়াম রসিদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, ভবিষ্য তহবিলে দেওয়া চাঁদার সনদ, শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, কল্যাণ তহবিলের চাঁদা, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে (ডিপিএস) চাঁদার সনদ, গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ ও জাকাত তহবিলে দেয়া চাঁদার সনদ। নতুন উদ্যোগ এবার যেভাবে গ্রহণ করছে করদাতারা: এর আগেও অনলাইনে রিটার্ন জমার ব্যবস্থা করেছিল এনবিআর। তবে তখন কিন্তু করদাতাদের মধ্যে খুব বেশি একটা উৎসাহ দেখা যায়নি। ২০১৬ সালে ৫১ কোটি টাকা খরচ করে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার ব্যবস্থাটি করা হয়েছিল, যা চার বছর চালু থাকে। ওই চার বছরের প্রতিবারই মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার করদাতা বার্ষিক রিটার্ন জমা দিতেন। সে জন্য ২০১৯ সালে ওই পদ্ধতি বন্ধ করে দেয় এনবিআর। পরে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে এনবিআরের আয়কর বিভাগের একটি বিশেষ দল মাত্র দুই কোটি টাকা খরচ করে নতুন অনলাইন ব্যবস্থা চালু করে। গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দুই লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দেন।