ইসরাইলের হামলায় ক্ষয়ক্ষতির যে তথ্য দিল ইরান
চলতি মাসের শুরুতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরাইল গত শনিবার হামলা চালায় দেশটির মূল ভূখন্ডে। এই হামলায় বড় কোনো ক্ষতি না হলেও ইরানের চার জন সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী। হামলার বিষয়ে ইসরাইলের ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ বলেছে, তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং তেহরান ও পশ্চিম ইরানের কিছু স্থাপনাকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার আছে এবং একইসঙ্গে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতিও দায়িত্বের বিষয়টি তারা স্বীকার করে। গত পহেলা অক্টোবর ইসরাইলে ইরান যে প্রায় দুশো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিলো। তার জবাবে ইসরাইল পাল্টা হামলা চালাবে- গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ধারণা করা হচ্ছিল। তেহরান তখন হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়ে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইলে ওই হামলার কথা বলেছিলো। ইসমাইল হানিয়ে গত জুলাইয়ে তেহরানেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তবে ইসরাইল ও তার সহযোগীরা ইরানের বহু ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছিলো। যদিও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইল মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানতে সক্ষম হয়। ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তেহরান, খুজেস্তান ও ইলাম প্রদেশে এবার হামলা করেছে ইসরাইল। এসব হামলা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলার দাবি করছে দেশটির সামরিক বাহিনী। একইসঙ্গে কিছু জায়গায় ‘সামান্য ক্ষতি’ হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। ইসরাইলের হামলার পর ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত মিডিয়ায় বিভিন্ন শহরে স্বাভাবিক চিত্র আছে এমন দৃশ্য প্রদর্শন করে। স্কুল ও খেলাধুলাও স্বাভাবিক চলছে বলে এসব খবরে দেখানো হয়। ইরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পরপরই ইসরাইলের সামরিক বাহিনী তাদের অভিযানের বিষয়টি ঘোষণা করে। আইডিএফ মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, ইসরাইল রাষ্ট্রের আত্মরক্ষায় নিজেদের প্রস্তুতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে তাদের সামরিক বাহিনী। একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করে দেন যে ইরান নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করলে ইসরাইল জবাব দিতে বাধ্য হবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন পাল্টা কোন হামলা না করার জন্য ইরানের প্রতি আহবান জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সহিংসতার এই চক্র বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলেছেন ইসরাইলের হামলার সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রকে আগেই অবহিত করা হয়েছিলো এবং এই হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন ইসরাইল ইরানের কোনো তেল অবকাঠামো কিংবা পরমাণু স্থাপনায় হামলা করেনি। এসব জায়গায় হামলা না করতে ইসরাইলকে অনুরোধ করেছিলো বাইডেন প্রশাসন। ওই কর্মকর্তা জানান যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরাইলকে ‘সুনির্দিষ্ট ও বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি কম হয়’ - এমনভাবে ইরানের হামলার জবাব দেওয়ার বিষয়ে উৎসাহিত করে আসছিলো। তবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিসে থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে ইসরাইল আমেরিকানদের নির্দেশনায় নয়, বরং নিজেদের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে হামলার টার্গেট ঠিক করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেছেন, ইরানর আগ্রাসনের জবাবে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে এবং তিনিও পাল্টা কোনো হামলা না করতে ইরানের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন ওই অঞ্চলে উত্তেজনা কমাতে তার দেশ কাজ করবে। তবে রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যদেশগুলো উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ জর্ডান ও সৌদি আরবও আছে। কাতার পাল্টাপাল্টি ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এ থেকে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। আর জর্ডান ইরানে হামলাকে ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ইরানে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে উস্কানি দেওয়া বন্ধ করা দরকার, যাতে করে নিয়ন্ত্রণহীন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা যায়। তবে শনিবার ভোরে ইসরাইলের হামলার কতটা সুনির্দিষ্ট ছিলো কিংবা হামলার মাত্রা সম্পর্কে এখনো পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়নি। ইরানের এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ফ্লাইট চলাচল অল্প সময়ের জন্য স্থগিত করে পরে আবার চালুর ঘোষণা দিয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে ৪২ বছর বয়স্ক কারখানা কর্মী হুমান বলছিলেন, শব্দের প্রতিধ্বনি হচ্ছিলো। যা ভয়ানক ও ভয়ঙ্কর। এখন মধ্যপ্রাচ্যে একটি যুদ্ধ। আমরা ভীত যে আমাদের এর মধ্যে টেনে নেওয়া হবে। তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা