অপরাধের স্বর্গরাজ্য মোহাম্মদপুর দিনদুপুরে ডাকাতি-ছিনতাই

২৭ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:০৪ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রীতিমতো আপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা। ডাকাতি, গণছিনতাই, লুট, খুনসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা ওই এলাকায় সংঘটিত হচ্ছে না। ৫ আগস্টের পর ৯ জন খুন হয়েছেন। এই অবস্থায় এলাকার শৃঙ্খলা ও জনমনে স্বস্তি ফেরাতে তৎপর রয়েছে যৌথ বাহিনী। এ লক্ষ্যে রোববার ঢাকা উদ্যানে অস্থায়ী সেনাক্যাম্প করে সেনাবাহিনী। এ খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এলাকার মানুষজন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা থেকে লুট করা অস্ত্র চলে যায় অপরাধীদের হাতে। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত করছে স্থানীয় কিশোর গ্যাংসহ সংঘবদ্ধ চক্র। এমন পরিস্থিতি তটস্থ হয়ে উঠেছে মোহাম্মদপুরের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এই অবস্থায় জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে মোহাম্মদপুরে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। আইএসপিআর রোববার এক বিবৃতিতে জানায়, শনিবার রাতে ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যানসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৫ অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী। সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র ব্রিগেড, র‌্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে এই যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। এই অভিযানকালে ৯টি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রাপ্তির পর থেকে মোহাম্মদপুর, আদাবর এবং শেরেবাংলা নগর থানাধীন ১৫২ জন অপরাধী, ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৭১ রাউন্ড গোলাবারুদ, ১৭২ ধরনের বিভিন্ন দেশি-বিদেশি অস্ত্র, ১টি গ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ নেশাজাত দ্রব্য উদ্ধার হয় বলে জানানো হয় বিবৃতিতে। এর আগে শনিবার রাতে অভিযান শেষে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিরাপত্তার স্বার্থে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানসহ একাধিক স্থানে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হবে। শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয় বসিলায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি সুপারশপে ডাকাতির ঘটনার প্রধান আসামি মো. আসলাম ওরফে রুবেল ওরফে আলমকে। এছাড়া র‌্যাব-২ মোহাম্মদপুরে অপহৃত এক ব্যক্তিকে সাভার ব্যাংক কলোনি এলাকা থেকে উদ্ধার ও ৪ অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার বসিলা ৪০ ফিট এলাকায় একটি মিনি সুপারশপে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। দোকানি ক্যাশে বসে ফোনে কথা বলছিলেন। এমন সময় মুখে মাস্ক পরা কয়েকজন যুবক ধারালো অস্ত্র হাতে দোকানে ঢুকে পড়ে। তাকে মারধর করে ক্যাশ বাক্সের সব টাকা নিয়ে যায়। এছাড়া একটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দোকানের সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, ডাকাত দলের হাতে ধারালো অস্ত্র। ২১ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মোহাম্মদপুর থানার নবোদয় হাউজিং এলাকার ডি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের রোজ গার্ডেন নামের একটি ভবনের সামনে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। নিজের বাসার পাশেই সেদিন ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন এক নারী। এ ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ২০ অক্টোবর সকাল পৌনে ১০টার দিকে মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেড এলাকায় ফিল্মি কায়দায় নেসলে কোম্পানির গাড়ি আটকিয়ে অস্ত্রের মুখে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে ৬ দুর্বৃত্ত। এছাড়া ঢাকা উদ্যানে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের ঘটনা ঘটে। ৫ আগস্টের পর থেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় অন্তত ৯ জন খুন হয়েছেন। এদের মধ্যে ২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজার বধ্যভূমি এলাকায় দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তারা হলেন, নাসির বিশ্বাস ও মুন্না। ১ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিল্লাল গাজীকে। বিল্লাল স্থানীয় আকাশ নীলা ওয়েস্টার্ন হাউজিংয়ের স্টাফ ছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ে গ্রিন ভিউ হাউজিং এলাকায় বাসায় ঢুকে শাহাদাত হোসেন নামে এক যুবককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া মোহাম্মদপুরের বসিলায় আরাম হাউজিং এলাকায় হাত-পা বেঁধে সিএনজি অটোরিকশাচালক শাহরিয়ার আশিককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসায়ীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শাহনেওয়াজ কালু, বাবুল হোসেনের ছেলে অটোরিকশাচালক সানু, শাহেন শাহ ও মো. সাগর নিহত হয়েছে। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায়ও জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় দুই গ্রুপে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে এক কিশোরসহ তিনজন আহত হয়েছেন। মোহাম্মদপুরের বসিলা, ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, বসিলা গার্ডেন সিটি, ৪০ ফিট, নবোদয় হাউজিংসহ অন্য এলাকা রীতিমতো অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় শনিবার মোহাম্মদপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনার আলটিমেটাম দিয়েছেন ছাত্র-জনতা। ওইদিন বিকালে মোহাম্মদপুর থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই আলটিমেটাম দেন তারা। চুরি-ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনার প্রতিবাদেই মোহাম্মদপুর থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এরপর তারা লিখিত দাবি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা পুলিশের কাছে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান বলেন, গত কয়েকদিনে মোহাম্মদপুরে বেশ কিছু অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। আমরা টহল জোরদার করে প্রতিরোধমূলক সব ব্যবস্থা নিচ্ছি। ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের ডিসি মো. তালেবুর রহমান বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের টহল টিমের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এর বাইরে চিহ্নিত চোর, ছিনতাইকারীদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিনিয়তই চোর-ছিনতাইকারীরা গ্রেফতার হচ্ছে। এদিকে ডিএমপির এক বার্তায় জানানো হয়, রোববার ছিনতাইকাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি ৪০টি চাপাতিসহ দুই চাপাতি কারিগরকে গ্রেফতার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। এছাড়া বংশালে পৃথক অভিযানে গ্রেফতার করা হয় তিন ছিনতাইকারীকে। তারা হলো- আব্দুর রহমান শুভ, মো. নওশাদ হোসেন ও মো. আজিজুল আহম্মেদ অয়ন।