মোহাম্মদপুরে এবার ‘রেকি করে’ ডাকাতি

২৭ অক্টোবর, ২০২৪ | ৫:০১ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকার ব্যস্ততম সড়ক তিন রাস্তার মোড়। এই মোড় থেকে সামনে এগিয়ে ডান পাশে কয়েক কিলোমিটার গেলেই বছিলা গার্ডেন সিটি। আশপাশের এলাকাগুলো জনবসতিপূর্ণ হলেও গার্ডেন সিটির শেষ মাথা এলাকায় লোকজনের বসবাস তুলনামূলক কম। নির্মাণাধীন ভবন এবং মার্কেটের সংখ্যাই বেশি। সেই এলাকাতেই শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা। ভর সন্ধ্যায় চাপাতি-রামদা হাতে নিয়ে দোকান মালিককে জিম্মি করে সুপারশপে টাকা লুট করে নেয় কয়েকজন দুর্বৃত্ত। এই ঘটনার আগে দোকানে ঢুকে রেকিও চালায় তারা। এরপর পাশের ফার্মেসি থেকে মাস্ক কিনে দোকানে ঢুকে তাণ্ডব চালানো হয়। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। বছিলা গার্ডেন সিটির একদম শেষ মাথায় অবস্থিত বহুতল ভবন কেএনএস টাওয়ারের নিচতলায় অবস্থিত মোল্লা সুপারশপ অ্যান্ড জেনারেল স্টোর। এই সুপারশপের পাশের একটি গলি দিয়ে সামনে এগোলেই বছিলা মধুমতি সিটি যাওয়ার রাস্তা। স্থানীয়রা জানান, এই রাস্তায় দিনদুপুরে ছিনতাই হওয়া সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোল্লা সুপারশপে ডাকাতির পর এই রাস্তা দিয়েই পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় ডাকাতির ঘটনা নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সুপারশপের মালিক মো. ওয়ালিউল্লাহর। তার চোখেমুখে তখনো আতঙ্কের ছাপ। তিনি বলেন, শুক্রবার মাগরিবের নামাজের সময় এক ছোট ভাইকে দোকানে বসিয়ে রেখে নামাজ পড়তে যাই। এ সময় লুঙ্গিপরা এক লোক দোকানে প্রবেশ করে বিকাশে টাকা পাঠানো যায় কি না জানতে চান। তখন আমি না থাকায় ওই লোক কিছুক্ষণ দোকানে থেকে চলে যান। মূলত ওই ব্যক্তিই দোকানে এসে রেকি করে যান। ওয়ালিউল্লাহ বলেন, কিছুক্ষণ পর লুঙ্গিপরা ওই লোকসহ চারজন মুখে মাস্ক লাগিয়ে রামদা হাতে দোকানে প্রবেশ করে। এ সময় আমার দোকানে থাকা এক কাস্টমারকে ‘যা বাইরা’ বলে বের করে দিয়ে আমার দোকানের সাটার লাগিয়ে দেয়। এরপর আমাকে একটি থাপ্পড় দিয়ে মেঝেতে বসিয়ে রাখে। এরপর দোকানের ক্যাশে থাকা ৫০ হাজার টাকা, আমার মোবাইল এবং দোকানের বিকাশ লেনদেনের মোবাইলটিও নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা একজন আরেকজনকে বলতে থাকে ওরে একটা কোপ দে। এ সময় আমি অনুনয়-বিনয় করলে তারা বলে চিৎকার দিলে কুপিয়ে মেরে ফেলব। এরপর তারা বের হয়ে বাইরে থেকে সাটার লাগিয়ে চলে যায়। আমি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম। এরপর সাটারে ধাক্কা দিলে বাইরে থেকে লোকজন এসে খুলে দেয়। তিনি আরও বলেন, ২০২০ সাল থেকে আমি এবং আমার বড় ভাই এই এলাকায় ব্যবসা করি। শুরুতে এই এলাকায় কিছুই ছিল না। এখন বিভিন্ন ভবন হচ্ছে। বর্তমানে এই এলাকার যে অবস্থা, কয়েক মাস আগেও তা ছিল না। যারা ডাকাতি করতে এসেছিল তারা কেউ এই এলাকার না। তবে আমার সন্দেহ এলাকার লোকজনের সহায়তায় তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার দোকানে প্রবেশের আগে তাদের একজন পাশের ফার্মেসি থেকেই মাস্ক কিনেছে। সেই ফার্মেসির সিসিটিভি ফুটেজে তাদের চেহারা স্পষ্ট আসেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করলে অবশ্যই সবার পরিচয় বের হয়ে আসবে। স্থানীয়দের ভাষ্য, গার্ডেন সিটি এলাকায় ছিনতাই এখন সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। শুক্রবারের এই ঘটনার আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও একটি অটোরিকশা ছিনতাই হয়। এই এলাকায় সন্ধ্যার পর কাউকে সুবিধামতো পেলেই হামলা চালায় ছিনতাইকারীরা। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় সুপারশপে ঢুকে ডাকাতির ঘটনার মতো ঘটনা প্রথম। ঘটনাস্থলের পাশেই অবস্থিত আরেক হোটেল ব্যবসায়ী মো. আরিফ জানান, সচরাচর লোকজন থাকলেও শুক্রবার সন্ধ্যায় একটু লোকজন কম ছিল। ভেতরে ঢুকে ওই ডাকাতরা সাটার লাগিয়ে দেওয়ার কারণে টের পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকাটা নষ্ট হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর আমাদের এই রাস্তায় ভয়ে কোনো রিকশাচালক আসতে চায় না। সেই মেইন রোডের মাথায় আমাদের নামিয়ে দেয়, আমরা হেঁটে হেঁটে আসি। কোনো পুলিশ টহল নেই, কিচ্ছু নেই। যে যখন পারছে, যাকে পারছে তাকে ধরে ছিনতাই করছে। কারও কাছে কিছু না পেলে তাকে পিটিয়ে, কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখে। এখানে এভাবে বসবাস করাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সুপারশপে ডাকাতির ঘটনায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। অভিযানে দুই কিশোর গ্যাংয়ের অন্তত ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত সোয়া ১১টায় ওই এলাকায় অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। এর আগে রাত সাড়ে ৯টায় চাঞ্চল্যকর ওই ডাকাতির ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মো. আসলাম ওরফে রুবেল ওরফে আলমকে (৩২) আটক করা হয়েছে। র‍্যাব-২ ও সেনাবাহিনীর আলাদা অভিযানে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। র‍্যাব-২-এর সহকারী পুলিশ সুপার শিহাব করিম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মোহাম্মদপুর থানাধীন বছিলা হাউজিংয়ের মিনি সুপারশপে চাঞ্চল্যকর দুর্ধর্ষ ডাকাতির একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী ও র‍্যাব-২-এর যৌথ বাহিনীর অভিযানে প্রধান আসামি মো. আসলাম ওরফে রুবেল ওরফে আলমকে আটক করা হয়। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন: মোহাম্মদপুরে আশঙ্কাজনকভাবে ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিরা মোহাম্মদপুর থানায় যায়। এ সময় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারাও যোগ দেন। থানায় উপস্থিত হয়ে পুলিশের কার্যক্রমের বিষয়ে ক্ষোভ জানান স্থানীয়রা। তারা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ জিয়াউল হকের সঙ্গে কথা বলেন। ছাত্র-জনতার পক্ষে তাদের প্রতিনিধিরা এডিসির কাছে মোহাম্মদপুর এলাকার বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি ছিনতাই রোধে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এ সময় পুলিশি ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করে এডিসি জিয়া বলেন, ‘আমার থানায় জনবল কম, গাড়ি কম। তবে এগুলো কোনো অজুহাত (এক্সকিউজ) হতে পারে না। আমি যখন এই পোশাকটা (পুলিশের পোশাক) পরেছি, আমার দায়িত্ব হচ্ছে আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়া। হ্যাঁ, আমি স্বীকার করতেছি, আমি সেক্ষেত্রে ব্যর্থ।’ এক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।