তলানিতে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি অর্থবছরের তিন মাস
চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর ঋণের প্রতিশ্রুতি তলানিতে নেমেছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৯৯ শতাংশের বেশি। কমেছে অর্থছাড়ও। তবে বেড়েছে ঋণ পরিশোধের চাপ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বৈদেশিক অর্থায়নের এ তথ্য প্রকাশ করে ইআরডি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই তিন মাসে দেশে যত বিদেশি ঋণ এসেছে, পরিশোধ করতে হয়েছে তার চেয়ে বেশি। প্রান্তিকের প্রতি মাসেই ঋণ ছাড়ের চেয়ে পরিশোধিত অর্থের পরিমাণ ছিল বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব ঋণ ছাড় হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। বিশেষ করে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুত ঋণ শিগগির পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, বিদেশি ঋণ আসার চেয়ে পরিশোধের চাপটা একটু বেশি, যা আগামী কয়েক বছর অব্যাহত থাকবে। কারণ, আমাদের মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য নেওয়া ঋণ অনেক ক্ষেত্রে সুদাসলে পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংকসহ অনেক সংস্থা ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সব মিলিয়ে হয়তো ৬-৭ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে। এটা পাওয়া গেলে এই চাপ অনেকটা কমে আসবে। ইআরডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ঋণ ও অনুদান মিলে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল ২৮৮ কোটি ৫ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছর প্রতিশ্রুতি কমেছে ২৮৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রতিশ্রুতি কমেছে ৯৯ দশমিক ০৫ শতাংশ। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে ঋণের কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। পুরোটাই অনুদান দেবে উন্নয়ন সহযোগীরা। অন্যদিকে গত অর্থবছরের একই সময়ের প্রতিশ্রুতির মধ্যে বেশি ছিল ঋণ। কমেছে ঋণের অর্থছাড়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম তিন মাসে অর্থছাড় হয়েছে ৮৪ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ঋণ ৬৬ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার এবং অনুদান ১৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে পাওয়া গিয়েছিল ১২৮ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ঋণ ১২৩ কোটি ১২ লাখ এবং অনুদান ছিল ৫ কোটি ৫ লাখ ২০ হাজার ডলার। এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বেড়েছে ঋণ পরিশোধের চাপ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময় সুদাসলে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ১১২ কোটি ৬৫ লাখ ১০ হাজার ডলার। এর মধ্যে সুদ ৪৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং আসল ৬৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে সুদ ও আসলসহ ঋণ পরিশোধ করা হয়েছিল ৮৭ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এর মধ্যে সুদ ৩৭ কোটি ৮৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং আসল ৪৯ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৫ কোটি ২৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ১২ হাজার ৮৭৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শোধ করতে হয়েছিল ৯ হাজার ৫৩৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থবছরের ব্যবধানে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৩ হাজার ৩৩৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। এই তিন মাসে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জাতিসংঘ এবং ইউরোপ ছাড়া অন্য কোনো সংস্থা বা দেশ ঋণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তবে অর্থছাড় করেছে প্রায় সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ। দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে আমেরিকা, জাপান ও ইউরোপ। এ ছাড়া সংস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছাড় করেছে এডিবি। জানা গেছে, বিদেশি ঋণের পাইপলাইনে থাকা প্রকল্পগুলো নতুন করে পর্যালোচনার সিদ্ধান্তের কারণে প্রথম তিন মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ প্রতিশ্রুতিতে বড় ধরনের ধস দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া এ দুই মাস আন্দোলনের কারণে কাজ হয়নি। তাই ঋণের অর্থছাড়ও কম হয়েছে।