নিউ ইয়র্কে রেমিট্যান্স মেলার নামে চলছে অর্থ পাচারকারীদের সম্মেলন

২১ অক্টোবর, ২০২৪ | ৯:০১ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে অন্তবর্তীকালীন সরকার যখন মরিয়া হয়ে কাজ করছেন ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারের নয়া কৌশলে নির্ধারণের লক্ষে নিউ ইয়র্কে কথিত রেমিট্যান্স বা অর্থপ্রেরণ মেলার নামে দুই দিনব্যাপী অর্থ পাচারকারীদের সম্মেলনের আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ পাচারকারীচক্র। আগামী রবি ও সোম (২০ ও ২১) অক্টোবর জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে এ মেলা। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারীদলের প্রতিনিধিরা এ মেলায় অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রে আগমনকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর সেপ্টম্বরে কথিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে থাকেন একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ মেলার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বিশ্বজিত সাহা নামের একজন বই ব্যবসায়ী। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে যোগদান করতে আসা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সঙ্গীদের অতিথি বানানোর টার্গেট করা হতো। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও থেমে নেই বিশ্বজিত সাহার এসব প্রতারণাপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন। এজন্য তিনি যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে। গত মাসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘে যোগদান করতে নিউ ইয়র্কে আসেন। এসময় তার হোটেল লবিতে দৌড়ঝাপ করতে দেখা যায় বিশ্বজিত সাহাকে। বইমেলা ও বাণিজ্য মেলার পর এবার কথিত রেমিট্যান্স মেলার আয়োজন করছেন বাংলাদেশের অর্থ পাচারকারীদের ঘনিষ্ট সহচর এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি বিশ্বজিত সাহা। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ম্যানহাটানের বিলাসবহুল হোটেল ম্যারিয়ট মার্কিসে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলার এক মাসেরও কম সময়ে নিউ ইয়র্ক সিটিতে আয়োজন করছেন দু’দিনব্যাপী রেমিট্যান্স মেলা। দেশের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মানি ট্রান্সফার অপারেটর, মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশগ্রহণ করবে বলে জানা গেছে। এবার অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মানি ট্রান্সফার অপারেটর, রেমিট্যান্স চ্যানেল পার্টনার, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস, অফশোর ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী মানি ট্রান্সফার এবং রেমিট্যান্স অ্যাপ রয়েছে বলে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। একই আয়োজনে গত বছর ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক, সানমান মানি এক্সপ্রেস, স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেস, ট্যাপটপ সহ বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০টির অধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। মেলায় সেরা ১০ জন রেমিট্যান্স প্রেরককে পুরস্কৃত করা হবে। এছাড়া পুরস্কৃত করা হবে, বাংলাদেশের শীর্ষ ৩ রেমিট্যান্স রিসিভার ব্যাংক এবং শীর্ষ ৩ মানি এক্সচেঞ্জ/রেমিট্যান্স চ্যানেল কোম্পানিকে। যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী স্বৈরশাসনামলে সুবিধাভোগী বিশ্বজিৎ সাহার ইউএসএ বাংলাদেশ বিজনেস লিঙ্ক ও মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক এই মেলার মূল আয়োজক সংগঠন। দুটি সংগঠনেরই প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ সাহা। মেলার আয়োজনকে আন্তর্জাতিক মোড়ক দিতে বিশ্বজিৎ চাতুর্যের সঙ্গে ‘গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অফ কমার্স’ নামে একটি সংগঠনকে সাথে রেখেছেন কাগজে কলমে। অতীতে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক, অর্থ-লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক। মেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে বিশ্বজিৎ সাহা প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী ঘরানার সক্রিয় কতিপয় বুদ্ধিজীবী ও অ্যাক্টিভিষ্টদের ব্যবহার করেন ঢাল হিসেবে। নিজের অসদুদ্দেশ্যকে আড়াল করার জন্য তিনি তাদেরকে দিয়েই অনেক কথা বলিয়ে থাকেন। আগে শুধু বইমেলার নামে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আদম আমদানী এবং অর্থ পাচারকারীদের সহযোগিতার অভিযোগ ছিলো বিশ্বজিত সাহার বিরুদ্ধে। বিগত দেড় দশকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার আমলে বিভিন্ন ধরণের মেলা আয়োজনের আড়ালে এই ব্যবসায়কে আরো সম্প্রসারিত করেন তিনি। প্রায় এক দশক পূর্বে বাংলাদেশের সাবেক সরকার প্রধানকে খুশী করতে ‘শেখ মুজিব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বিশ্বজিত। এর মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের সান্নিধ্যে চলে যান তিনি। হাতিয়ে নেন মোটা অংকের অর্থ। নানাবিধ উসিলায় বিশ্বজিত সখ্যতা গড়ে তুলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সাথে। এভাবেই কপাল খুলে যায় বিশ্বজিত সাহার। নিউইয়র্কে তিনি একের পর এক বিভিন্ন নামে মেলা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে থাকেন। আর এসব অনুষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ অর্থের যোগানদাতা হিসেবে উঠে আসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী ব্যাংক, অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সহ অনেক ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক। নিউইয়র্কের অনুষ্ঠানগুলোতে বড় ধরণের আর্থিক সহযোগিতার জন্য বিশ্বজিত বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলেন এফবিসিসিআই কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সাথে। প্রতিবছর শেখ হাসিনা যখন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে যোগদান করতে আসতেন, সেই সময় তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে কৌশলে তার সফরসঙ্গীদের অতিথি করে কাজ বাগিয়ে নিতেন। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও থেমে নেই বিশ্বজিত সাহার এসব প্রতারণাপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন। এজন্য তিনি যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে। গত মাসে প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘে যোগদান করতে নিউইয়র্কে আসেন। এসময় তার হোটেল লবিতে দৌড়ঝাপ করতে দেখা যায় বিশ্বজিত সাহাকে। সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণ নেই তার কোন অনুষ্ঠানেই। দেশের পরিবর্তিত অবস্থার পরও বিশ্বজিত সাহার রেমিট্যান্স মেলার আয়োজন নিয়ে প্রবাসীদের মাঝে ব্যাপক কৌতুহলের উদ্রেক করেছে। তাদের প্রশ্ন যে ব্যক্তি বাংলাদেশের লুটেরা অর্থ পাচারকারীদের সহযোগী, যিনি প্রবাসে কোন রেমিট্যান্স প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বা অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত নন। এমনকি বাংলাদেশে কোন অর্থও প্রেরণ করেন না সেই ব্যক্তি কিভাবে এতোবড় রেমিট্যান্স মেলার আয়োজন করছেন? শুধু কি তাই মানি রেমিট্যান্স সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার প্রদানেরও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এসব মেলার আড়ালে বিশ্বজিত সাহা তার প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পাচারের হাবে পরিণত করেছেন। তার এবারের মেলা আয়োজনেও বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক বড় ধরণের আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে বলে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে। নিউইয়র্কের এই মেলার আড়ালে চলেছে বড় ধরনের অর্থ পাচার। মেলার মওসুমে তাদের অনেকে আদম পাচার করে এসেছেন অর্থের বিনিময়ে। এবারও এই চক্রটি বেশ সক্রিয়। বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন ব্যাংক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মোটা অংকের অর্থ দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বিশ্বজিৎ সাহাকে। বিশ্বজিৎ সাহা দীর্ঘ তিন দশক যাবত মুক্তধারা বইমেলার নামে করে আসছেন বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও আদম ব্যবসা। অবৈধভাবে মুক্তধারার নাম ব্যবহার করার কারণে বাংলাদেশে মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে। শেখ মুজিব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’র প্রবক্তা বিশ্বজিৎ হাসিনা সরকারের আমলে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক বনেছেন। তিনিই আবার কৌশলে স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশের অপচেষ্টা করছেন প্রতিনিধিত্ব করার। সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশীরা ইতোমধ্যেই এই প্রচেষ্টা রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রশ্ন অন্তবর্তী সরকারের অভ্যন্তরে থেকে কারা এসব প্রতারণামূলক কর্মকান্ডে সহযোগিতা করছে? সূত্র: বাংলা প্রেস