পল্লী বিদ্যুতে ‘শাটডাউনের’কুশীলবদের সন্ধানে পুলিশ

২০ অক্টোবর, ২০২৪ | ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

পল্লী বিদ্যুতে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ নামে সারা দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার নেপথ্যের উসকানিদাতা ও নির্দেশদাতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। এজন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রেপ্তার আট কর্মকর্তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। আসামিরা কাদের নির্দেশে ও উসকানিতে সারা দেশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল করতে চেয়েছিল, তাদের নাম জানতে চাচ্ছেন জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত পুলিশের কর্মকর্তারা। আন্দোলনের নেপথ্যে থাকা কুশীলবদের চিহ্নিত করতে গ্রেপ্তার কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ‘দুই দফা বাস্তবায়নের দাবিতে’ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল করে দেওয়া হয়। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকে। ওই ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় বিভিন্ন জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনকারী নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে আটজন রিমান্ডে রয়েছে। এর মধ্যে গত শুক্রবার ছয়জনকে এবং গতকাল শনিবার দুজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। মামলার তদন্তকারীরা মনে করছেন, আন্দোলনের নামে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতা ও জনমনে সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল আন্দোলনকারীরা। এ চক্রান্তের নেপথ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত। আন্দোলনকারীরা বিগত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালীদের মদদে নানা অযৌক্তিক দাবি-দাওয়ায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ছিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশিকুর রহমান দেওয়ান বলেন, রিমান্ডে থাকা আসামিদের এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য ও মোবাইল ফোনে থাকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট দেখে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচলের নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের আভাস মিলেছে। এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্য কুশীলব কারা এবং আসামিরা কাদের উসকানি ও নির্দেশে এ ধরনের কাজ করেছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তারা (আসামিরা) আন্দোলনের আগে-পরে কাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছে, কাদের নির্দেশে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে মোবাইল ফোনগুলো ফরেনসিক পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ খাত অস্থিতিশীল করতে আন্দোলনকারীরা শৃঙ্খলা ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। তারা এজন্য কর্মবিরতি পালন, গণছুটি ও গণপদত্যাগ, সিস্টেম ব্ল্যাক আউট, দাবি আদায়ের নামে মাঠ পর্যায়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে তালা মারা, আগুন দেওয়া, সাইনবোর্ড ভাঙা, অফিসে ঢুকে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া ও বাসার বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। খিলক্ষেত থানা পুলিশ জানায়, পৃথক দুই মামলায় গত শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার রাজন কুমার দাস, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া, কুমিল্লার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দীপক কুমার সিংহ, মাগুরার শ্রীপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. রাহাত, নেত্রকোনার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মনির হোসেন ও সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর বেলাল হোসেনকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। গতকাল লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আলী হাসান মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (আইটি) এস কে শাকিল আহমেদকে দুই দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় মোট ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৬০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিক থেকেই দেশের সব পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের একীভূতকরণ এবং দুই চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মীদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন চলে আসছিল। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত মে ও জুলাই মাসে ১৫ দিন কর্মবিরতি, আগস্টে লং মার্চ টু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটামে গণছুটি ঘোষণা, সারা দেশে একযোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে তারা। এমন প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২০ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা ও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে আন্দোলন শুরু করেছিল সমিতিগুলো। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের অনুরোধে সেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।