সাগরে লঘুচাপ, রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’য়

১৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ১০:২৬ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটির বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। পরে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর আকাশও ছিল মেঘলা। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘ডানা’। এদিকে সাগরে লঘু চাপের কারণে বরিশাল ও যশোরে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, সোমবার কিংবা মঙ্গলবারের দিকে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পরে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে এটি ভারতের উড়িষ্যা বা পশ্চিমবঙ্গের দিকে আঘাত হানতে পারে। তবে গতিপথ পরিবর্তন করে বাংলাদেশেও আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘ডানা’ হতে পারে বলেও জানান তিনি। জানা যায়, এবারে ‘ডানা’ নামটি কাতারের দেওয়া। এ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় রূপ নিলে এর নাম হবে ‘ডানা’। তারপর গতিপ্রকৃতি দেখে কখন কোথায় আঘাত হানতে পারে-সে পূর্বাভাস দেবে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শুক্রবার দেওয়া ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা যায়, শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এর আগে গত বুধবার থেকেই সাগরে একটি লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়। সেটি ভারতের তামিলনাড়ু উপকূলে বেশি প্রভাব ফেলে বৃহস্পতিবার বিদায় নেয়। বরিশালের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা: বরিশাল ব্যুরো জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘু চাপের কারণে বরিশাল নগরীতে কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে চরম জনভোগান্তি দেখা দিয়েছে। টানা বৃষ্টিতে নগরীর প্রধান সড়ক সদর রোড, বটতলা থেকে নবগ্রাম রোড, কলেজ রোড, ভাটিখানা, আমানতগঞ্জ, পলাশপুর, কলেজ অ্যাভিনিউ, রূপাতলী হাউজিংসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পানিতে তলিয়ে যায় নগরীর বর্ধিতাংশ। এছাড়া বরিশাল বিভাগের পাঁচটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রূপাতলীর বাসিন্দা ইমতিয়াজ অমিত বলেন, অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা নিয়মে পরিণত হয়েছে। সদর রোডের বাসিন্দা আলামিন বলেন, বৃষ্টি হলেই প্রধান সড়ক সদর রোডেও পানি উঠে যায়। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে বিভাগের ১২টি গুরুত্বপূর্ণ নদীর মধ্যে পাঁচটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যশোরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত: যশোর ব্যুরো জানায়, যশোরে ১১৭ মিলিমিটার ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। শহরের নিচু অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে পানি। অধিকাংশ রাস্তায় গোড়ালি, আবার কোথাও হাঁটুপানি জমেছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী। তাদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত নালা-ব্যবস্থাপনা না থাকা, বিদ্যমান নালার অচলাবস্থা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই পৌরসভার অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা বজ্রসহ তুমুল বৃষ্টি হয়। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বজ্রপাতসহ গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এরপর এটি ভারি বৃষ্টিপাতে রুপ নেয়। থেমে থেমে বজ্রপাতের সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাত হয় আড়াইটা পর্যন্ত। পুরোপুরি বৃষ্টি বন্ধ হয় বিকাল চারটার দিকে। শহরের খড়কী শাহ আবদুল করিম সড়কের বাসিন্দা মোস্তফা কামাল বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই আমাদের এই এলাকার বাড়িঘরে হাঁটু পানি জমে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। এই অঞ্চলের ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। দীর্ঘদিন ধরে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানালেও কোনো কাজ হয়নি। যশোর পৌরসভার পানি নিষ্কাশন বিভাগের প্রকৌশলী এসএম কামাল বলেন, জলাবদ্ধতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। আমরা ড্রেনের পানি নিষ্কাশনে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো অপসারণ করছি। বর্তমানে পৌর প্রশাসকের উপস্থিতিতে চাঁচড়া এলাকায় এস্কেভেটর দিয়ে পানি বের হওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কাজ চলছে। এদিকে, ভারি বর্ষণে ভেসে গেছে মাছের ঘের, পুকুর-জলাশয়। মাঠের পর মাঠ ফসল পানির নিচে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, গেল কয়েক মাসে যশোরে ব্যাপক বৃষ্টিপাতে সবজির ক্ষতি হয়েছে।