তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে বিএনপির রিভিউ আবেদনে ১০ যুক্তি
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে বিএনপি মহাসচিবের আবেদনে ১০টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। মোট ৮০৭ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন আগামী রোববার (২০ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের এবিষয়টি ব্রিফ করেন। এসময় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মোঃ রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, অ্যাডভোকেট তৌহিদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ৪১ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। যুক্তির মধ্যে রয়েছে-আদালতে প্রকাশ্যে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত আদেশ সংবিধান সংশোধনের পর পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে বাদ দেয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের অবসরের ১৮ মাস পর রায় প্রকাশ করা একটি বিচার বিভাগীয় প্রতারণা। বিষয়টি নিয়ে একটি ফৌজদারী মামলাও চলমান রয়েছে বলে যুক্তিতে উল্লেখ করা হয়। ‘গণতন্ত্র এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন জমজ সন্তানের মত একটি ছাড়া আরেকটি অর্থহীন। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র গ্রহণযোগ্য বাহন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ ধ্বংস করা হয়েছে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে যুক্তিতে বলা হয়।’ যুক্তিতে আরো বলা হয়, সংবিধান একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল। সময়ের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে এর কার্যকারিতা থাকে না। সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব সংবিধানকে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করা যান্ত্রিকভাবে নয়। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিতে এ রায় পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। বিএনপির যুক্তিতে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী সংশ্লিষ্ট মৌলিক মর্যাদা অর্জন করে। সুপ্রিম কোর্ট এই মৌলিক স্তম্ভ অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে না। ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সে রায় রিভিউ চেয়ে আবেদনটি করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধিনে নজিরবিহীন কারচুপির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। ফলে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির কাঁধে ফ্যাসিবাদ জেকে বসে। অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। মানুষ মুক্তি পায়। দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জিত হয় । তিনি আরও বলেন, ১৯৯১, ১৯৯৬ ২০০১ এবং ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পূর্বেই সংশোধন করে তৎকালীন আওয়ামী সরকার। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংসদে বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। আদালতে ঘোষিত রায়ের সাথে প্রকাশিত রায় ভিন্ন ছিল। যা বিচার বিভাগীয় প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয় বলে মনে করেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, দেশের ৯৫ ভাগ লোক মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। মা, মাটি ও মানুষের দল বিএনপি জনগণের এই প্রত্যাশা পূরণে উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই রিভিউ আবেদন করেন।