সীমিত হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ
চলমান আর্থিক সংকটে সরকারি তহবিলের অর্থে প্রকল্প নিতে নিরুৎসাহিত করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর অংশ হিসাবে সীমিত হচ্ছে ‘উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্প। এর আগে দুই ধাপ বাস্তবায়নের পর এবার তৃতীয় ধাপে ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সীমিত পরিসরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন খাতের ব্যয় বাদ এবং কোনো কোনো খাতের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে এনে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধনের জন্য সুপারিশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে পরিকল্পনা উপদেষ্টার নির্দেশনা হচ্ছে দেশীয় অর্থায়নে একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ না হলে প্রকল্প গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রকল্প বাদ দেওয়া না গেলেও ধীরে চল নীতি গ্রহণ করতে হবে। তবে তিনি চান বৈদেশিক অর্থায়ন আছে-এমন প্রকল্প যেন বিশেষ অগ্রাধিকার পায়। আমরা সেভাবেই কাজ করছি। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ একনেক বৈঠক শেষে সোমবার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা রাজনৈতিক বা কম গুরুত্বের প্রকল্প বলে কোন আলাদা তালিকা করছি না। সেক্টরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি ওনারা যেসব প্রকল্প কম গুরুত্বের বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া বলে মনে করবেন সেগুলোর বিষয়ে তারাই ব্যবস্থা নেবেন। এজন্য আমার দপ্তর পর্যন্ত আসতে হবে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব প্রকল্প চলমান এবং অনেক দূর কাজ এগিয়েছে, সেক্ষেত্রে বন্ধ করার সুযোগ নেই। তবে নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা (সচিব) দক্ষতার সঙ্গে এ কাজ করছেন। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ‘উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি তহবিলের অর্থে এটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৩ জেলার ৪৭টি উপজেলায় ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির কথা। এক্ষেত্রে দুর্যোগের সময় প্রতিটিতে ১ হাজার জন করে মোট ১ লাখ ২০ হাজার জন বিপদাপন্ন মানুষ আশ্রয় পেত। দুর্যোগ ছাড়া অন্যসময় ১২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনের সুবিধা তৈরি হতো। সব প্রক্রিয়া শেষে প্রকল্পটি একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট জানান, উপকূলীয় ও ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০১১ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। আবার ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ২২০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার তৃতীয় ধাপে ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। সূত্র জানায়, পিইসি সভায় অংশ নিয়ে অর্থ বিভাগের উপসচিব মো. মশিউর রহমান তালুকদার বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রকল্পের পরিধি কমানো দরকার। এক্ষেত্রে প্রাপ্যতার ভিত্তিতে স্থান নির্বাচনসহ গুণগতমান ঠিক রেখে মানসম্মত বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া তিনি প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানো প্রয়োজন বলে মত দেন। সভায় অংশ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান রোজিনা আক্তার নানা খাতের প্রস্তাব বাদ ও যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, অনিয়মিত শ্রমিক মজুরির জন্য ২০ লাখ টাকা, অনুলিপি ব্যয় ৮ লাখ টাকা, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বাবদ ২ কোটি ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার টাকা এবং মোটরসাইকেল কেনা খাতে ৯০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া ২০টি কম্পিউটার, ৫টি ল্যাপটপ, ২০টি প্রিন্টার, দুটি ফটোকপি মেশিন এবং দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরার জন্য ৪২ লাখ টাকার সংস্থান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ফায়ার এক্সটিংগুইশার খাতে ৬০ লাখ, ফাস্ট এইড বক্সের জন্য ৬ লাখ এবং আসবাবপত্রের জন্য ৩৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রস্তাব রয়েছে। এসব ব্যয়ের মধ্যে ল্যাপটপ, ফায়ার এক্সটিংগুইশার এবং ফাস্ট এইড অঙ্গ বাদ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, আসবাবপত্র, কম্পিউটারসহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় অঙ্গের ব্যয় আনুপাতিক হারে কমানো যেতে পারে। পিইসি সভার সভাপতি এবং পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশের ভৌগোলিক অবস্থা, সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ঘূর্ণিঝড়ের চিত্র বিবেচনায় প্রত্যেক উপজেলায় ২টি করে বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় আনুপাতিক হারে যৌক্তিক পর্যায়ে কমানো প্রয়োজন। সূত্র জানায়, ৩ অক্টোবর পিইসি সভার কার্যবিবরণী জারি করে পরিকল্পনা কমিশন। এরপর পিইসি সভার সুপারিশ প্রতিপালন করে ডিপিপি সংশোধনের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের মোট ব্যয় কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।