এখনো ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন গ্রাহক

৯ অক্টোবর, ২০২৪ | ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

কয়েক মাস ধরেই ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে ঘরে রাখার প্রবণতা বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে গত নভেম্বর থেকে এ প্রবণতা বাড়লেও এখন পর্যন্ত তা অব্যাহত রয়েছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসে সবচেয়ে বেশি সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হয় আর্থিক খাতে। এরই অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেইসঙ্গে লুটেরা ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করায় কয়েকটি ব্যাংকের দুর্বলতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব ব্যাংক গ্রাহকের ৫ হাজার টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। এতে গ্রাহকের মধ্যে বেড়েছে আতঙ্ক। ব্যাংক থেকে তারা আমানত তুলে নিচ্ছেন। ফলে বাড়ছে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ গত আগস্টে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩৪ হাজার ৭৮ কোটি বা ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। আগস্ট শেষে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৪ কোটি, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। এরও আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে ৮০৪ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে গ্রাহকরা এই পরিমাণ টাকা তুলে নিলেও সেটা আর ব্যাংকে ফেরত আসেনি। ফলে এই টাকা রয়ে গেছে মানুষের হাতে। মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার পর যা আর জমা হয়নি, তা-ই ব্যাংকের বাইরে রাখা টাকা হিসেবে পরিচিত। এই টাকা মানুষ নিজের কাছে বা কোনো সমিতিতে রাখেন। এভাবে টাকা মালিকের নিজের হাতে কিংবা এক হাত থেকে অন্য হাতে ঘুরলেও ব্যাংকে ফেরেনি। জানা গেছে, ব্যাংক খাতে অনিয়ম, ঋণ জালিয়াতিসহ নানা ধরনের খবর প্রকাশিত হওয়ায় মানুষের আস্থাহীনতা বাড়ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সম্প্রতি কয়েকটি ব্যাংকের প্রকট দুর্বলতার খবর। এসব ব্যাংকের আমানতকারীরা আতঙ্কে টাকা তুলে নিচ্ছে। কয়েকটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পারায় গ্রাহকের আতঙ্ক আরও বাড়ছে। এতে সুদহার বাড়ানোর পরও গ্রাহকরা নতুন আমানত ব্যাংকে রাখছেন না। ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মতে, সম্প্রতি কয়েকটি ব্যাংকের তারল্য সংকট ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ বাড়তে থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত নেতিবাচক খবর মানুষের মনে ব্যাংকের প্রতি অনাস্থার জন্ম দেয়। এ ছাড়া সম্প্রতি কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে না পারায় গ্রাহকের মধ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ফলে তারা ব্যাপক হারে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ঘরে জমা রাখছেন। আবার দেশের বর্তমান বাজার ব্যবস্থায়ও নগদ অর্থের চাহিদা ব্যাপক। ডিজিটাল লেনদেনের ওপর করারোপ করা হয়। ফলে সাধারণ মানুষ নগদ টাকায় কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। গুটিকয় শপিংমল আর হোটেল-রেস্টুরেন্ট বাদ দিলে দেশের কোথাও ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবস্থা নেই। দোকানিরাও চান লেনদেন নগদে হোক। এ ছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ হস্তান্তর করলে তার ওপর শুল্ক দিতে হয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রতিটি লেনদেনে শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এ কারণে সাধারণ মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে এবং নগদ লেনদেন করছে। এ ছাড়া, অসাধু ব্যবসায়ী, অসৎ কর্মচারী এবং চোরাকারবারিরাও ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে আগ্রহী নয়। এ কারণেও ব্যাংকের বাইরে বাড়ছে নগদ অর্থের প্রবাহ। এর ফলে অবারিত হচ্ছে ছায়া অর্থনীতির দ্বার। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মঈনুল ইসলাম বলেন, মূলত ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার কারণেই ব্যাংকের বাইরে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এর সহজ কোনো সমাধান নেই। তিনি বলেন, অনেকগুলো ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে। যে কারণে ব্যাংকের বাইরে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এ সমস্যা দূর করতে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান সংকট চিহ্নিত করতে হবে। সেটি দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। ব্যাংকের বাইরে টাকা রাখার প্রবণতা কমে আসবে। অপর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সুদের হার বাড়লেও ব্যাংকের আমানত বাড়ছে না। গত আগস্টে আগের মাসের তুলনায় আমানত কমেছে ০ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি কমেছে মেয়াদি আমানত। এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কয়েকটি ব্যাংকের দুর্বলতা প্রকট আকার ধারণ করলেও এতদিন সেটা প্রকাশ করা হয়নি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা প্রকাশ করায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। এতে গ্রাহকরা একদিকে এসব ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে, অপরদিকে নতুন আমানতও কম রাখছেন। ফলে ব্যাংকের আমানত কিছুটা কমেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে শিগগির এটি বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশা করি।