এখনো উদ্ধার হয়নি পুলিশের ১৪৫৯ অস্ত্র ২৪৫০২৪ গোলা-বারুদ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। ওই সরকারের আমলে পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকে জড়িয়ে পড়েছিলেন অপেশাদার কাজে। তখন পুলিশের প্রতি ছিল সাধারণ মানুষের চরম ক্ষোভ। তাই সরকার পতনের পর একের পর এক আক্রমণ আসে পুলিশের ওপর। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায়। এতে নিহত হন প্রায় অর্ধশত পুলিশ সদস্য। লুট করা হয় পুলিশের পাঁচ হাজার ৭৩টি অস্ত্র ও ছয় লাখ পাঁচ হাজার ১৭৭ রাউন্ড গুলি। ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর লুট হওয়া কিছু অস্ত্র ও গোলা-বারুদ ফেরত দেওয়া হয়। এই অস্ত্রকে উদ্ধার হিসেবে দেখায় পুলিশ। তবে অনেক অস্ত্র থেকে যায় বাইরে। এ নিয়ে তৈরি হয় নানা আশঙ্কা। এ অবস্থায় লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোল-বারুদ ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সরকার। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা পড়েনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অস্ত্র ও গোলা-বারুদ। তাই এই অস্ত্র উদ্ধারে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় বিশেষ অভিযান। সব মিলিয়ে গত দুই মাসে চার হাজার ২৫৪টি অস্ত্র ও তিন লাখ ছয় হাজার ১৫৩ রাউন্ড গোলা-বারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখনো উদ্ধার হয়নি এক হাজার ৪৫৯ অস্ত্র ও দুই লাখ ৪৫ হাজার ২৪ রাউন্ড গোলা-বারুদ। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশের এক হাজার ২৯২টি চায়না রাইফের লুট হয়। এগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৯৫১টি। এখনো ১৭১টি চায়না রাইফেল উদ্ধার হয়নি। লুট হওয়া ১০টি রাইফেলের মধ্যে ইতোমধ্যেই নয়টি উদ্ধার করা হয়েছে। লুট হওয়া ২৪৫টি চায়না এসএমজির মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ২১৬টি। ২৯টি এসএমজি উদ্ধারে অভিযান চলমান। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে লুট হয়েছিল ৩২টি এলএমজি। এর মধ্যে ২৭টি উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হতে বাকি আছে পাঁচটি এলএমজি। সরকারবিরোধী অন্দোলন ঘিরে ৫৩৯টি চায়না পিস্তল লুট হয়। এগুলোর মধ্যে ৩০৮টি উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হতে বাকি আছে ২৩১টি। সূত্র মতে, লুট হওয়া ৩৩টি নয় বাই ১৯ মিমি পিস্তলের মধ্যে সবক’টিই উদ্ধার করা হয়েছে। ১১ বোরের দুই হাজার ৬৮টি শটগান লুণ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে এক হাজার ৬৪৩টি। উদ্ধার হতে বাকি আছে ৪২৫টি। লুট হওয়া ৫৮৫টি গ্যাস গানের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪৪৫টি। এছাড়া ১৫টি গ্যাস লঞ্চার লুট হয়েছিল। এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে আটটি। আর লুট হওয়া তিনটি সিগন্যাল পিস্তলের মধ্যে দুটি এখনো উদ্ধার হয়নি। সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের টিয়ারগ্যাস শেল লুট হয়েছিল তিন লাখ এক হাজার ৯৩৯ রাউন্ড। ইতোমধ্যে এক লাখ নয় হাজার ৩৬২ রাউন্ড টিয়ারগ্যাস শেল উদ্ধার করা হয়েছে। লুট হওয়া এক হাজার ৪৭৫ রাউন্ড টিয়ার গ্যাস গ্রেনেডের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে এক হাজার ১৮২ রাউন্ড। সাউন্ড গ্রেনেড লুট হয়েছিল চার হাজার ৭৩৩ রাউন্ড। এগুলো মধ্যে এক হাজার ৫১৯ রাউন্ড এখনো উদ্ধার হয়নি। ২৯০ রাউন্ড কালার স্মোক গ্রেনেডের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৪৪১ রাউন্ড। লুট হওয়া ৫৫ রাউন্ড মাল্টিপল ব্যাং স্টান গ্রেনেডের মধ্যে সবই উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া ফ্ল্যাশ ব্যাং লুট হয়েছিল ৯০০ রাউন্ড। এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ২২৬ রাউন্ড। লুট হওয়া ১৭৮ রাউন্ড হ্যান্ড হেল্ড টিয়ার গ্যাস স্প্রের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৬২ রাউন্ড। ১১৬ রাউন্ড হ্যান্ড হেল্ড টিয়ার গ্যাস স্প্রে এখনো উদ্ধার হতে বাকি আছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলা-বারুদের মধ্যে বেশির ভাগই উদ্ধার হয়েছে। যেসব অস্ত্র, গোলা-বারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি সেগুলোর সন্ধানে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।