শাহজালাল ফার্টিলাইজার: আত্মসাতের টাকায় জমি ২৯৯ শতাংশ ফ্ল্যাট ৪টি
সিলেটের শাহজালাল ফার্টিলাইজারের আত্মসাৎ করা অর্থে কেনা ২৯৯ শতাংশ জমি ও ৪টি ফ্ল্যাট জব্দ করেছে আদালত। এর দলিল মূল্য ১০ কোটি ৫ লাখ টাকার বেশি। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) এই সার কারখানা থেকে এ অর্থ হাতিয়ে নেন খোন্দকার মুহাম্মদ ইকবাল। তিনি শাহজালাল ফার্টিলাইজারের হিসাব বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ৩৮ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন এলাকায় থাকা জমি ও ফ্ল্যাট জব্দ করে আদালত। এছাড়া এই জালিয়াতির ঘটনায় পৃথকভাবে ২৬টি মামলার তদন্তও করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জানা গেছে, ২০০৫ সালে বিসিআইসির প্রকল্প শাহজালাল সার কারখানায় সহকারী হিসাবরক্ষক পদে চাকরি নেন ইকবাল। অর্থ আত্মসাতের কারণে ৫ বছর আগে ওই কারখানা থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ১৪ বছরের চাকরি জীবনে তিনি ৯১টি গাড়ি, ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, দুটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও ঢাকা-গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এসবের পেছনে স্ত্রীর নামে দুটি নামসর্বস্ব কোম্পানি খুলে ভুয়া বিল ও রসিদ জমা দিয়ে শাহজালাল সার কারখানা প্রকল্প থেকে ৩৮ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। সিআইডির মুখপাত্র বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, শাহজালাল ফার্টিলাইজারের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের এপ্রিলে অর্থ পাচার আইনে মামলা করে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। এতে খোন্দকার মুহাম্মদ ইকবাল ও স্ত্রী হালিমা আক্তারকে অভিযুক্ত করা হয়। আত্মসাতের অর্থের বিভিন্ন এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাট কেনার প্রমাণ পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এসব সম্পদ ক্রোক করেন। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে আত্মসাতের টাকার গন্তব্য ও আরও কারা এই ঘটনায় জড়িত রয়েছে তা খোঁজা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২২ সালের জুনে ইকবাল ও তার স্ত্রী হালিমা আক্তারকে গ্রেফতার করে র্যাব। তখন তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়। পরে র্যাবের অভিযোগের ভিত্তিতে ইকবাল ও হালিমা দম্পতির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি। অনুসন্ধান শেষে ২০২৩ সালের ২৬ এপ্রিল মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) সোহানুর রহমান। এতে বলা হয়, ইকবাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া বিল ও রসিদ জমা দিয়ে বিসিআইসির শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্পের ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ ২৭ হাজার ৮৫১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসব ভুয়া বিল ও রসিদ তৈরি করা হয়েছে ইকবালের স্ত্রী হালিমা আক্তারের দুটি প্রতিষ্ঠান টিআই ইন্টারন্যাশনাল ও নুসরাত ট্রেডার্সের নামে। সিআইডি জানায়, জব্দ হওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার রমনা ও এয়ারপোর্ট এলাকায় ৪টি ফ্ল্যাট যার দলিল মূল্য ২ কোটি ৯৩ লাখের বেশি। ঢাকা, গাজীপুর ও ময়মনসিংহে মোট ২৯৯.১ শতাংশ জমি রয়েছে যার দলিল মূল্য ৭ কোটি ১১ লাখের বেশি। এছাড়া বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইকবাল ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৯১টি গাড়ির নিবন্ধন রয়েছে। এই দম্পতির মালিকানায় থাকা মাইক্রোবাস, কার, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন টিআই ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে রেন্ট-এ-কারের ব্যবসা করা হয়। এছাড়া ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে ওয়ান পয়েন্ট ফার্মা অ্যান্ড ডিপার্টমেন্টাল স্টোর নামের তিনটি চেইন শপ রয়েছে। বর্তমানে সিআইডি এসব সম্পদের তথ্য যাচাই করছে।