থমকে গেছে চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত কার্যক্রম

৫ অক্টোবর, ২০২৪ | ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

সরকার বদলের আগে চাঞ্চল্যকর বেশকিছু অপরাধের ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ওইসব ঘটনায় তাৎক্ষণিক অপরাধী গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গলদঘর্মও হয়। মামলা তদন্তে ব্যাপক গতিও পরিলক্ষিত হয়। চাঞ্চল্যকর এসব ঘটনার মধ্যে অন্যতম ঝিনাইদহ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ-সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা ও লাশ টুকরো টুকরো করে গুম করা, রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অবহেলার অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানি, ঢাকা শুল্ক বিভাগের গুদামের লকার থেকে ৬১ কেজি সোনা গায়েব, তেজগাঁওয়ে মিসটার্গেট পথচারী ভুবন মার্ডার মামলা প্রভৃতি। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ পুরোনো মামলার তদন্ত কার্যক্রম থমকে গেছে। তদন্ত ও তদারকি কর্মকর্তা পরিবর্তনে ব্যাহত হচ্ছে মামলা তদন্তের স্বাভাবিক গতি। অনেক ক্ষেত্রে আগে থেকে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা অসহযোগিতা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে। পুলিশের দয়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুরোনো মামলা তদন্তে গতি আসতে কিছুটা সময় লাগবে। অনেক ক্ষেত্রে পুরোনো কর্মকর্তারা (৫ আগস্টের আগে থেকে যারা দায়িত্বে ছিলেন) অসহযোগিতা করছেন। আবার নতুন যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের গুছিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে। জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘সব মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে চলছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্ত নিজস্ব গতিতে চলে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পরিবর্তন হলেও তার সুপিরিয়র অথরিটি আছেন, তারাও তদন্তের একটি পার্ট। ফলে মামলার আইও বদল হলেও তদন্ত শেষ হবে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’ সাবেক সংসদ-সদস্য আনার হত্যা মামলা : ঝিনাইদহ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন করা হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে ডরিন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এছাড়া ভারতে একটি হত্যা মামলা হয়। বাংলাদেশে হওয়া মামলাটির তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ওয়ারী বিভাগ। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে মোট নয়জনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন বাংলাদেশে গ্রেফতার শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর, সেলেস্তি, ফয়সাল, মোস্তাফিজ, গ্যাস বাবু ও মিন্টু। এছাড়া ভারতে গ্রেফতার আছেন সিয়াম ও কসাই জাহিদ। সরকার পরিবর্তনের পর গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মাহফুজুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে। নতুন করে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো আনারের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। ফলে উদ্ধার হওয়া শরীরের খণ্ডিত অংশ আনারের কি না, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্যরাও এখনো গ্রেফতার হয়নি। এ বিষয়ে ডিবি ওয়ারী বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু একটি চেঞ্জ হয়েছে, নতুন আইও, নতুন অফিসার-সবাই নতুন। সেই হিসাবে বুঝে নিতে একটু সময় লাগছে। মামলাটির উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই, আসামিও নতুন করে গ্রেফতার নেই বলে তিনি জানান। ঢাকা শুল্ক বিভাগের গুদামের সোনা গায়েব : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা শুল্ক বিভাগের গুদামের লকার থেকে ৬১ কেজি সোনা গায়েব হয়। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় চুরির মামলা করে শুল্ক বিভাগ। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলাটি থানা পুলিশ তদন্তকালে ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর হয়। ডিবি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কাস্টমসের আটজনকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ঢাকা শুল্ক বিভাগের কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে ডাকার পরই ২০ সেপ্টেম্বর হঠাৎ পুলিশ সদর দপ্তর এক অফিস আদেশে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করে। এরপর থেকেই ধীরগতিতে চলতে থাকে মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আরও ঝিমিয়ে পড়েছে এ মামলার তদন্ত। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইনস্পেকটর আশরাফ ও তদারকি কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বদলি হয়ে গেছেন। নতুন করে আইও হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন ইনস্পেকটর নুরুন্নবী সরকার। তিনি বলেন, যেহেতু সোনা আত্মসাতের বিষয়টি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক, সেহেতু এ মামলায় কিছুটা টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। জানতে চাইলে নতুন তদারকি কর্মকর্তা পিবিআই-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানজিনা আক্তার বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) বদলি হয়ে গেছেন। এ কারণে আমরা একদম নতুন একজন আইও দিয়েছি। উনি মামলাটি বুঝে নিচ্ছেন। আপাতত মামলাটি স্লো এগোচ্ছে।’ বেইলি রোডে আগুনের মামলা : ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে মৃত্যু হয় ৪৬ জনের। এ ঘটনায় অবহেলার কারণে মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে ডিএমপির রমনা থানায় মামলা করে। তদন্তের শুরুতেই পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে। পরে মামলাটি ৭ মার্চ থেকে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডিও চারজনকে গ্রেফতার করে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মামলাটির তদন্তু কর্মকর্তা বদলের পর থেকে তদন্তে নেই কোনো অগ্রগতি। জানা যায়, তদন্ত কর্মকর্তা ইনস্পেকটর মাসুদ পারভেজ বদলি হয়ে চলে গেছেন রাজশাহী রেঞ্জে। বর্তমানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, ইনস্পেকটর শাহজালাল মুন্সিকে। তিনিও এখনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু এটি সেনসেটিভ বিষয়, এজন্য নতুন চিফ (সিআইডিপ্রধান) এলে কার্যক্রম শুরু হবে। জানতে চাইলে মামলাটির তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা সিআইডি ঢাকা মেট্রো-সাউথের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আনিচুর রহমান বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা নতুন করে আবার তদন্তে যাতে গতি আসে এবং দ্রুততম সময়ের জন্য নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি। তেজগাঁওয়ে চাঞ্চল্যকর ভুবন হত্যা : গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় বিজি প্রেসের সামনের সড়কে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন অ্যাডভোকেট ভুবন চন্দ্র শীল। জেল থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া তারিক সাঈদ মামুনকে টার্গেট করে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুড়লে মিস টার্গেটে নিহত হন ভুবন। গুলশানের অফিস থেকে মোটরসাইকেলে বাড়িতে যাওয়ার পথে ভুবন চন্দ্র শীল গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভুবনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ভুবনের স্ত্রী রত্না রানী শীল বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন উপপরিদর্শক হাফিজুর রহমান। ঘটনার পর পুলিশ মারুফ বিল্লাহ ওরফে হিমেল নামে একজনকে গ্রেফতার করে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উপপরিদর্শক হাফিজুর রহমান বদলি হয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এ মামলার নতুন করে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তবে এ মামলাও থমকে আছে। জানতে চাইলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী শামীমুর রহমান বলেন, নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।