পিঠ বাঁচাতে এলডিপিতে কৃষক লীগের সেলিম!
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি সেলিম প্রধান। আওয়ামী লীগ শাসনামলে গেল ১৫ বছর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে, চাঁদাবাজি, থানার তদবির ও আটক বাণিজ্য, টিআর-কাবিখার অর্থ লোপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর যোগ দিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি)?। সম্প্রতি এলডিপির মহাসচিব রেদওয়ান আহমেদের হাতে ফুল দিয়ে তিনি ওই দলে যোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, পিঠ বাঁচাতেই এলডিপিতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, সেলিম প্রধান একসময় বিএনপি করতেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন এমপি আলী আশরাফের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরপর একাধিকবার বিতর্কিত ভোটে মাইজখার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তখন থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সেলিম। মাইজখার ইউনিয়নের ভুমরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, সেলিম প্রধান একজন সন্ত্রাসী। মাইজখার ইউনিয়নবাসী ১৫ বছর ধরে তার কাছে জিম্মি ছিল। তার কাজ ছিল মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। চাঁদা না দিলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া, মারধর করা। এলাকার বহু মানুষকে মারধর করে চাঁদা নিয়েছেন তিনি। আমাকে মারধর করে ২৩ হাজার টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সব বরাদ্দ আত্মীয়-স্বজন এবং নিজ দলীয় ক্যাডারদের দিয়েছেন। টিআর কাবিখা, এলজিএসপির পুরো বরাদ্দই লুট করেছেন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, সেলিম প্রধানের কারণে চান্দিনার মানুষ আওয়ামী লীগকে চরমভাবে ঘৃণা করে। তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে মানুষ সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি। তিনি সালিশ-দরবারের নামেও চাঁদাবাজি করতেন। এমন অপরাধীকে কিভাবে এলডিপিতে আশ্রয় দেওয়া হলো। তিনি আরও বলেন, সেলিম প্রধান ছিলেন মালদ্বীপ প্রবাসী। পারিবারিকভাবে ছিলেন খুবই অসচ্ছল। কিন্তু গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। কুমিল্লার আনোয়ারা হাউজিংয়ে তার ৭তলা বাড়ি রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ী এলাকায় সাড়ে ৬ কোটি টাকায় কিনেছেন ঢাকা হাইওয়ে ইন হোটেল। মিয়ার বাজার এলাকায় টাইম স্কয়ার হোটেলের মালিকানা নিয়েছেন চুক্তিভিত্তিক। আলেখারচর এলাকায় রয়েছে প্লট। কুমিল্লা নগরীতে হাফছা হোটেলসহ নিজ এলাকায় রয়েছে কয়েক বিঘা জমি। স্থানীয়রা জানান, সেলিম প্রধান মাইজখার ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন। ১ আগস্ট থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত অস্ত্রশস্ত্র ও নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী নিয়ে চান্দিনায় ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে মাঠে ছিলেন তিনি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান। চেয়ারম্যান কার্যালয়ে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় তাকে বরখাস্ত করা হয়। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। মাইজখার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, সেলিম একজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ। মাইজখারে তার কথাই ছিল শেষ কথা। মেহার এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন, রুবেল হোসেন, জাকির হোসেন, আব্দুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সেলিম সব সময় ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়ে বেঁচে যান। তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সেলিম প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে আমি কোনো সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করিনি। আমার বিরুদ্ধে একটি মহল মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কখনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি করিনি। টিআর কাবিখা এলজিএসপির সরকারি বরাদ্দ নিয়েও কোনো অনিয়ম করিনি। চান্দিনা উপজেলা এলডিপির সভাপতি সামছুল হক বলেন, সেলিম প্রধান আমাদের মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করেছেন। দলবল নিয়ে তাকে ফুল দিয়েছেন। কিন্তু তিনি একজন বিতর্কিত লোক। নানা অপকর্ম থেকে বাঁচতে আমাদের দলে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা তার মতো লোক দলে গ্রহণ করব না। চান্দিনা থানার ওসি নাজমুল হাসান বলেন, সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে অনেকেই কথা বলছে। কিন্তু সরাসরি মামলা না থাকলে আমাদের তেমন কিছু করার নেই।